হাইকোর্টে জামিন পেলেন বিএনপির সাংসদ হারুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে নির্বাচিত সাংসদ এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদকে ২১ অক্টোবর মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয় (ফাইল ছবি)
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে নির্বাচিত সাংসদ এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদকে ২১ অক্টোবর মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয় (ফাইল ছবি)

সাংসদ হিসেবে শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে দুর্নীতির মাধ্যমে তা বিক্রির মামলায় দণ্ডিত বিএনপির সাংসদ হারুন অর রশীদ ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন।

সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হারুন অর রশীদের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে আজ সোমবার বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ৫০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে।

ওই মামলায় ২১ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। তিন আসামির মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে হারুন অর রশীদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার হাইকোর্টে আপিল এবং জামিন আবেদন করেন বিএনপির এই সাংসদ।

আদালতে হারুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় হারুন অর রশীদের স্ত্রী আইনজীবী সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া উপস্থিত ছিলেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী।

এই মামলায় জামিন হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ হারুন অর রশীদের কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানান তাঁর আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলা বিচারাধীন থাকায় অবস্থায় হারুন অর রশীদ ১৫ মাস কারাগারে ছিলেন। যখন জামিনে ছিলেন, তখন জামিনের অপব্যবহার করেননি এবং ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হন। এসব বিবেচনায় আদালত তাঁকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। মামলার নথিপত্রও তলব করা হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হারুন অর রশীদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট ওই জামিন দেন। জামিন আদেশের বিরুদ্ধে কাল মঙ্গলবার চেম্বার আদালতে আবেদন করতে যাচ্ছে দুদক।

২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর ১৭ মার্চ তিনজনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মামলাটি করে পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করে সাংসদ হারুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৮ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে হারুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিচার শুরু করেন আদালত।

বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন হারুন অর রশীদ। সেদিন আদালত তাঁকে সাজাপরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া অপর দুই আসামির সাজা হয়। এর মধ্যে চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমানকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং গাড়ি ব্যবসায়ী ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৪০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দুজন পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, তৎকালীন সাংসদ হারুন অর রশীদ ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে একটি হামার ব্র্যান্ডের গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেন। পরে গাড়িটি নিজে ব্যবহার না করে ইশতিয়াক সাদেকের মাধ্যমে বাজারদরের কম মূল্যে এনায়েতুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। আইন অনুযায়ী শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ি তিন বছরের আগে বিক্রি করলে শুল্ক দিতে হবে। কিন্তু হারুন সে শর্ত ভঙ্গ করে গাড়িটি বিক্রি করে দেন।