শিক্ষকের গলা চেপে ধরলেন আরেক শিক্ষক, মামলা

নরসিংদীর শিবপুরের সহকারী প্রধান শিক্ষকের গলা চেপে ধরার অভিযোগে আরেক শিক্ষকের নামে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের কামরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ফরম পূরণকে কেন্দ্র করে শিক্ষক মিলনায়তনেই এ ঘটনা ঘটে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ৮-১০ জন স্থানীয় লোক এই হামলা চালায়। তবে হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনা এত বড় নয়, সামান্য কথা-কাটাকাটি হয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলামকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি বাদী হয়ে শিবপুর থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় নাম থাকা আসামিরা হলেন হারুন অর রশিদ (৪৩), তাঁর ভাই জামাল উদ্দিন (৪৫) এবং দুই ভাতিজা রাকিব মিয়া (২৭) ও আজিম মিয়া (২৫)।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্রেণি শিক্ষক আবদুস সাত্তার আফ্রাদকে। তিনি এ দায়িত্ব নিতে না চাইলে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামকে ফরম ফিলাপের দায়িত্ব দেন প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান। এই ঘটনায় অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত লাগায় ক্ষুব্ধ হয়ে এমন অন্যায় কাজ করেছেন বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদ। আগামী ১০ নভেম্বর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের শেষ দিন। যিনি ফরম পূরণের দায়িত্বে থাকেন তিনি স্কুল থেকে দায়িত্ব ভাতা পান।

শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ দুপুরে শ্রেণিকক্ষে বসে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের কাজ করছিলাম। আমি কেন ফরম পূরণের কাজ করছি এই নিয়ে হারুন অর রশিদ উচ্চবাচ্য শুরু করেন। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সামনেই আমার শার্টের কলার চেপে ধরেন হারুন। পরে আমিও হারুনের শার্টের কলার চেপে ধরি। এর ১০ মিনিটের মধ্যেই ক্ষুব্ধ হারুন তার বাড়ি থেকে ৮-১০জন স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে এসে আমার গলা চেপে ধরেন। সঙ্গে থাকা যুবকরাও ইট ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। এ সময় ৯ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে চেয়ার, গ্লাস ও ছবি ভাঙচুর করা হয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির তিন সদস্য ও শিক্ষকেরা মিলে তাদের নিবৃত্ত করে।’।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনাটি এত বড় কিছু না, সামান্য কথা-কাটাকাটির বিষয়। আরও কিছু জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবে তার নিয়োগ হয়। পরে টাকা খরচ করে অবৈধভাবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। খোঁজ নিলে আপনারা দেখবেন, তাঁর বিএড সার্টিফিকেট ও নিয়োগ প্রক্রিয়াও অবৈধ। স্থানীয় প্রভাব ও টাকার কাছে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের ওপর এই ন্যক্কারজনক হামলায় আমরা বিস্মিত। স্থানীয় প্রভাব খাঁটিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিদ্যালয়ের ভেতরে এসে ৮-১০জন মিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে তাকে মারধর করা হয়েছে। আমার কক্ষে প্রবেশ করেও ভাঙচুর করেছে তারা। এমনভাবে তার গলা চেপে ধরা হয়েছিল, আর একটু হলেই তাঁর মৃত্যু হতো।’

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।