আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। গতকাল বাগেরহাটের শরণখোলার উত্তর সাউথখালীতে।  ইনজামামুল হক
আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। গতকাল বাগেরহাটের শরণখোলার উত্তর সাউথখালীতে। ইনজামামুল হক

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত ঘোষণায় সিডরে বিধ্বস্ত বাগেরহাটের শরণখোলার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী এলাকায় বেড়িবাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় ৮ সহস্রাধিক মানুষ। বিপদ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ।

তবে ঝুঁকি থাকলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা মানুষের একটি বড় অংশের। স্থানীয়দের ভাষ্য, ঘর ফেলে সবাই যাবে না। রাতে বাতাস ও পানির চাপ বাড়লে তখন প্রয়োজন হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে তারা।

এদিকে গত শুক্রবার শুরু হওয়া বৃষ্টি থেমে থেমে বাড়ছে। সঙ্গে মৃদু ঝোড়ো হাওয়া বইছে। নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। সকাল থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। স্ব-উদ্যোগে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি, সন্ধ্যা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের সরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করছে প্রশাসন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, কিছুটা গুমোট আবহাওয়া, যা সিডরের মতো প্রচণ্ড ঝড়ের লক্ষণ। তবে ইলিশ শিকার মৌসুম হওয়ায় সকালে ১০ নম্বর বিপৎসংকেত উপেক্ষা করেও কিছু জেলে বলেশ্বর নদে মাছ ধরছেন।

কচুয়ার ভাসা গ্রামের জেলে ইমারত আলী বলেন, ‘২২ দিনের অবরোধ শেষে পূর্ণিমার গান শুরু হচ্ছিল। সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলছিল। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় টিকতে না পেরে দ্রুত ফিরে আসছি।’

ফিরিয়ে আনা হয়েছে সুন্দরবনের পর্যটকদের। সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকিপল্লির ৮ সহস্রাধিক জেলে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বনের বিভিন্ন ছোট ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মামুনূর রশীদ বলেন, উপকূলীয় উপজেলা মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল ও মোংলা ঘূর্ণিঝড়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকার সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে কাজ চলছে। ৬৬ হাজার ১২০ জন সন্ধ্যা পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।

সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকিপল্লির জেলেদেরও র‍্যাব, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগিতায় নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলায় ৩৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার খোলা হয়েছে।

কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট ইমতিয়াজ আলম বলেন, দুবলার শুঁটকিপল্লির জেলেদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কোস্টগার্ডের নিজস্ব ক্যাম্পেও অনেকে আশ্রয় নিয়েছে। মোংলা চ্যানেলে অবস্থান করা কোস্টার ও লাইটারকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ১০টি নৌযান।

শরণখোলার বলেশ্বর নদের তীরবর্তী সাউথখালী এলাকার সাইক্লোন শেল্টারগুলো ভরে গেছে। কাছের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ফাঁকা না থাকায় অনেকে ছুটছে তাফালবাড়ি ও উপজেলা সদর রায়েন্দার সাইক্লোন শেল্টারে। তবে সদরের রায়েন্দা এলাকায় সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ আসেনি। অনেকে আবার আশ্রয়কেন্দ্র যেতে চায় না ঘর ফেলে।

রায়েন্দার বলেশ্বর নদের পাড়ের বাসিন্দা স্বর্ণা রানী। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে যাব না। ঘর রেখে যাওয়া যায় না।’

দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে রায়েন্দা নতুন লঞ্চঘাট এলাকার শেরেবাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ে আশ্রয় নিতে নাতি জয় ও প্রদীপ কর্মকারের সঙ্গে আসেন স্থানীয় গোলা রানী কর্মকার (৯০)। স্কুলের বেঞ্চ দিয়ে দুই নাতি ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ঢালাও বিছানা তৈরি করেছেন।

সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বলেন, তাঁর ইউনিয়নের রায়েন্দা, গাবতলা, উত্তর সাউথখালী, দক্ষিণ সাউথখালী, বগী ও শরণখোলা গ্রামের ৮ সহস্রাধিক মানুষ বেড়িবাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সাউথখালী ইউনিয়নে বলেশ্বর নদের পাড়ের প্রায় ৩ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। মধ্য সাউথখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ময়না আক্তার বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনই পুরো ভরে গেছে, জায়গা নেই। এখন যারা পরে আসছে, তারা দূরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে।’

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দুপুর থেকে লোকজন আসতে শুরু করলেও তাদের জন্য পানি ও খাবারের ব্যবস্থা ছিল না। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, উপজেলার ৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচটা পর্যন্ত ৩৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

শরণখোলার বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পরিদর্শন করেছেন পাউবো বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান। তিনি বলেন, ৩৫/১ পোল্ডার শরণখোলার বগী অংশে এক কিলোমিটার এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া মোরেলগঞ্জের একটি অংশ এবং রামপাল ও মোংলা এলাকা বেড়িবাঁধের বাইরে।