বরিশালে ৭০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছে 'বুলবুল'

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিতে বরিশাল নগরের অলিগলিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ছবিটি আজ রোববার সকালে নগরের পলিটেকনিক রোড থেকে তোলা। ছবি: সাইয়ান
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিতে বরিশাল নগরের অলিগলিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ছবিটি আজ রোববার সকালে নগরের পলিটেকনিক রোড থেকে তোলা। ছবি: সাইয়ান

প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের মধ্য দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল উপকূলে আঘাত হানে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৭০ কিলোমিটার। ঝড়ের তাণ্ডবে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

প্রবল বর্ষণে বরিশাল নগরের সব সড়ক, অলিগলিতে হাঁটুপানি। জীবনযাত্রা থমকে গেছে।

বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মিলন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ৭০ কিলোমিটার বেগে বরিশালের ওপর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। সেই সঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বরিশালে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা থেকে আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২২২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। সাগরে মাছ ধরার ট্রলারগুলো গতকাল বিকেলের মধ্যেই নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যায়।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়ার পর সাগরে মাছ ধরার ট্রলারগুলো তীরে আসতে শুরু করে। অনেক ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন খালের মধ্যে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

সকাল সাড়ে নয়টার পর থেকেই বরগুনার তালতলী, পাথরঘাটা এবং পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডব শুরু হয়। সেই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হতে থাকে।

বরিশালের কীর্তনখোলা, বরগুনার পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বরসহ বিভিন্ন নদনদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার জোয়ার বইছে। এতে চর, দ্বীপ ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে প্লাবন দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখনো কোনো হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

পিরোজপুর
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পিরোজপুরে কিছু কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হ‌য়ে‌ছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে। মঠবা‌ড়িয়া উপ‌জেলার খেতা‌ছিড়া ও কচুবা‌ড়িয়া গ্রা‌মের বেড়িবাঁধের ক‌য়েক‌টি স্থা‌ন ভে‌ঙে গে‌ছে। ভে‌ঙে যাওয়া বাঁধ দি‌য়ে ব‌লেশ্বর ন‌দের পা‌নি লোকাল‌য়ে ঢু‌কে গ্রাম দু‌টি প্লা‌বিত হ‌য়ে‌ছে। ইন্দুরকা‌নি উপ‌জেলায় কাঁচা ঘরবা‌ড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হ‌য়ে‌ছে। প্রচুর গাছপালা উপড়ে গেছে। গাছ চাপায় এক‌টি গরু মারা গে‌ছে।

ঝড়ের প্রভাবে জেলার নদ–নদী‌তে পা‌নি বে‌ড়ে‌ছে। গতকাল রা‌তে ঝ‌োড়ো হাওয়া ও বৃ‌ষ্টি হ‌য়েছে। আজ ভোর থে‌কে সকাল নয়টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসে। তবে নয়টার পর আবারও ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়।

মঠবা‌ড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি এম সরফরাজ ব‌লেন, নদীর পা‌নি স্বাভা‌বি‌কের চে‌য়ে তিন থে‌কে চার ফুট বে‌ড়ে‌ছে। ব‌লেশ্বর নদ তীরবর্তী খেতা‌ছিড়া, কচুবা‌ড়িয়ায় বেড়িবাঁধের কয়েক‌টি স্থান ভে‌ঙে লোকাল‌য়ে পা‌নি ঢুক‌ছে। তিনি জানান, স্থানীয় লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রগু‌লো‌তে অবস্থান কর‌ছেন। তাঁদের খাবার ও পা‌নি দেওয়া হ‌চ্ছে।