পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন নয়: সুলতানা কামাল

প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ আয়োজিত ‘উন্নয়ন উচ্ছেদ, মানবাধিকার ও পরিবেশ বিপর্যয়’ গণশুনানিতে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ আয়োজিত ‘উন্নয়ন উচ্ছেদ, মানবাধিকার ও পরিবেশ বিপর্যয়’ গণশুনানিতে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘আমরা এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিয়ে মহাব্যস্ত আছি। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি পূরণের একটা অঙ্গীকার করেছি। এসডিজিতে আছে, কোনো উন্নয়ন যেন কোনোভাবে পরিবেশ ও মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না হয়।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মিলনায়তনে আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এক গণশুনানির অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। ‘উন্নয়ন, উচ্ছেদ, মানবাধিকার ও পরিবেশ বিপর্যয়’ শীর্ষক এই গণশুনানির আয়োজন করেছে প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ।

অনুষ্ঠানে তিনটি অধিবেশনে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন এবং সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে উচ্ছেদ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা গণশুনানিতে অংশ নেন।

প্রথম অধিবেশনের শুনানিতে বিচারক ছিলেন সুলতানা কামাল, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের সমন্বয়ক সি আর আবরার।

শুনানি শেষে সুলতানা কামাল বলেন, রাষ্ট্র অঙ্গীকার অনুযায়ী সাংবিধানিকভাবে, গণতান্ত্রিকভাবে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে না।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা বিবাদীপক্ষ তথা সরকারের প্রতিনিধিদের এই গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আসেনি। এর মানে, এখানে একটা জবাবদিহির সুযোগ ছিল। তারা সেটা গ্রহণ করল না। এর মধ্য দিয়ে যে মানসিকতা বোঝা গেল, রাষ্ট্র কোনো ধরনের জবাবদিহির মধ্যে আসবে না।’

সুলতানা আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র যখন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করছে, তখন তার পরিবেশগত সমীক্ষা দরকার। প্রকল্প মানে শুধু জমি দখলের বিষয় না, সে জায়গার মানুষের জীবন-জীবিকার ওপরে প্রকল্প কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা নিরূপণ করা। মাতারবাড়ী প্রকল্পে রাষ্ট্র সেই সার্বিক চিন্তার মধ্য দিয়ে যায়নি। এই প্রকল্প করার আগে জনগণের মতামত গ্রহণ করার কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। অনেক কিছুই ফিরিয়ে নিয়ে যেত পারব না। সামনে যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হবে, তা যেন গণতান্ত্রিকভাবে মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়।’

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সময় সরকার স্থানীয় লোকজনের মতামত নেয়নি দাবি করে সুলতানা কামাল বলেন, এই প্রকল্পের জন্য ওই অঞ্চলের মানুষ তাঁদের জমি হারিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, লেখক ও গবেষক ফিলিপ গাইন, লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা প্রমুখ।