বাসচালক ও সহকারীদের খামখেয়ালিপনায় সড়কে দুর্ঘটনা: আদালত
বাসচালক ও চালকের সহকারীদের খামখেয়ালির কারণে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীসহ যাত্রীরা প্রাণ হারাচ্ছেন। তাঁদের কবল থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। চালকদের আরও সতর্ক হতে হবে। একই সঙ্গে চালকেরা কোনোভাবেই যাতে হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাতে না পারেন, সে ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশদের আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল হতে বলেছেন আদালত।
বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলার রায়ে আজ রোববার আদালত এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আদালত মালিকদেরও আরও দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। আদালত মনে করেন, চুক্তিতে ভাড়া দেওয়ার কারণে বাসচালক ও সহকারীদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আজ রোববার বিকেলে আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দুই চালক ও এক সহকারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত কিছু পর্যবেক্ষণও দেন।
রায়ে আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ৩৭ জনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। বাসচালক মাসুম বিল্লাহসহ তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। বাসচালক মাসুম বিল্লাহ ও অপর বাসচালক জুবায়ের সুমন জানতেন, যে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও তাঁরা সেদিন আগেভাগে যাত্রী তোলার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। আগে যাত্রী তোলার জন্য জোবায়ের সুমন তাঁর বাসটি সামনে নিয়ে গিয়ে উড়ালসড়কের ঢালে জায়গা ব্লক করে রেখেছিলেন। পেছনে থাকা বাসচালক মাসুম বিল্লাহ তখন আগে যাত্রী তোলার জন্য বাম পাশ দিয়ে গিয়ে যেখানে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকেন, সেখানে বাসটি তুলে দেন। এতে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব, দিয়া খানমসহ কয়েকজন ছাত্রী গুরুতর আহত হন।
চালকের সহকারী এনায়েত হোসেনের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, বারবারই তিনি মাসুম বিল্লাহকে দ্রুত গাড়ি না চালানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তারপরও মাসুম বিল্লাহ দ্রুতগতিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাস তুলে দেন।
গত বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তার ওপর জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে পড়ে। এতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ও ৯ জন আহত হয়।
নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)।
এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর জাবালে নূর বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে ঢাকার আদালতে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অভিযোগপত্র দেন ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম। ছয় আসামির বিরুদ্ধে গত ২৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
ছয় আসামি হলেন জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং দুই চালকের দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ। তাঁদের মধ্যে আসাদ পলাতক। আর বাসমালিক শাহাদাত জামিনে আছেন।
অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান জাবালে নূরের মালিক শাহাদাত হোসেন। তাঁর পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসে। বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলে।
আরও পড়ুন: