'নীরব এলাকা' সচিবালয়ে সরব হর্ন

শব্দদূষণ রোধে রাজধানীর সচিবালয়ের চারপাশ আজ মঙ্গলবার থেকে ‘নো হর্ন জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে এলাকাটিতে কোনো গাড়ি হর্ন দিলে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানার আওতায় আসবে। টয়েনবি সার্কুলার রোড, ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
শব্দদূষণ রোধে রাজধানীর সচিবালয়ের চারপাশ আজ মঙ্গলবার থেকে ‘নো হর্ন জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে এলাকাটিতে কোনো গাড়ি হর্ন দিলে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানার আওতায় আসবে। টয়েনবি সার্কুলার রোড, ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় হর্ন নিষিদ্ধের প্রথম দিনে উচ্চ মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে। নীরব এলাকায় হর্ন নিষিদ্ধ হওয়ার পরও তা বাজিয়েই যাচ্ছেন গাড়িচালকেরা। দিনভর এই এলাকায় শোনা গেছে যানবাহনের তীব্র হর্ন, যা শব্দের মানমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল।

সচিবালয়কে নীরব এলাকা ঘোষণার প্রথম দিন ছিল আজ মঙ্গলবার। প্রথম দিনে কোনো চালককে হর্ন বাজানোর জন্য জরিমানা করা হয়নি। তবে তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে। সকালে সচিবালয় এলাকায় সচেতনতা কার্যক্রম চালান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। এক শোভাযাত্রা শেষে মন্ত্রী গাড়ি চালকদের হর্ন না বাজানোর অনুরোধ জানান।

দিনভর ওই এলাকায় স্টিকার, লিফলেট বিতরণ, মৌখিক অনুরোধসহ বিভিন্নভাবে চালকদের সচেতনতার কার্যক্রম চলে। আগামীকাল বুধবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় হর্ন বাজালে জরিমানা করা হবে।

আজ সকাল দশটা থেকেই সচিবালয় এলাকায় শব্দের তীব্রতা নির্ণয়ে কাজ করছিল স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (কেপস) সাত সদস্যের একটি দল। দলটি আজসহ গত চার দিন ধরে সচিবালয় এলাকার ১২টি স্থানে বিভিন্ন সময়ে শব্দের তীব্রতা নির্ণয় করেছে।

দলটি পর্যবেক্ষণে দেখতে পেয়েছে আজ সকাল থেকে সচিবালয় এলাকায় উচ্চ শব্দ ছিল। সবচেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে সচিবালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট মোড়ে। এখানে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ১১৫ ডেসিবেল এবং সর্বনিম্ন ৭৫ ডেসিবেল পাওয়া গেছে। সবচেয়ে কম মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে সচিবালয়ের পশ্চিম পাশে মসজিদ সংলগ্ন সড়কে (৬২ দশমিক ২ ডেসিবেল)। দলটির সাউন্ড প্রেশার লেভেল (এসপিএল) মিটার যন্ত্রে সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে ৯৫ ডেসিবেল, ৩ নম্বর গেটের সামনে ১০৫ ডেসিবেল, দক্ষিণ-পূর্বে ৯৮ ডেসিবেল, উত্তর-পশ্চিম অংশে ১০৪ দশমিক ৩ ডেসিবেল, শিক্ষা ভবনের সামনে ৯৬ ডেসিবেল, পল্টন মোড়ে ৯৬ ডেসিবেল এবং কদম ফোয়ারাতে ৯৮ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ পাওয়া গিয়েছে। অথচ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, এই এলাকায় শব্দের মানমাত্রা হিসেবে দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল থাকার কথা।

সচিবালয়ের চারপাশের সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের মতোই অহেতুক হর্ন বাজাচ্ছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা। মোটরসাইকেল চালক, ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাসগুলো এ ক্ষেত্রে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।

রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় হর্ন নিষিদ্ধের প্রথম দিনে উচ্চ মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে। সচিবালয় এলাকায় শব্দের তীব্রতা নির্ণয়ে কাজ করে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (কেপস) সাত সদস্যের একটি দল। ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর। ছবি: হাসান রাজা
রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় হর্ন নিষিদ্ধের প্রথম দিনে উচ্চ মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে। সচিবালয় এলাকায় শব্দের তীব্রতা নির্ণয়ে কাজ করে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (কেপস) সাত সদস্যের একটি দল। ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর। ছবি: হাসান রাজা

সচিবালয় এলাকাটি নীরব এলাকা বলে ঘোষণা করেছে সরকার। গত ৮ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়, ১৭ ডিসেম্বর থেকে জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকাকে নীরব জোন (নো হর্ন জোন) হিসেবে গণ্য করা হবে। ২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা থাকবে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৪০ ডেসিবেল। ওই বিধিমালার ধারা ৮(২) এ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে হর্ন বাজালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথম অপরাধের জন্য কমপক্ষে এক মাস কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। পরবর্তী অপরাধের জন্য কমপক্ষে ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের দলটির নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। উচ্চ শব্দ কমানোর ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, গাড়ির মালিক, চালককে প্রথমে সচেতন ও সহনশীল হতে হবে। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যানজট নিরসনে কাজ করতে হবে। কারণ মানুষ যানজটে বা সিগন্যালে থাকলেও বেশি হর্ন দেয়। আর সড়কে প্রতিবন্ধকতা কমাতে হবে।

সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তাকে হর্নমুক্ত রাখতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, সচিবালয়ের চারপাশ হর্ন মুক্ত ঘোষণার মাধ্যমে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নীরব এলাকায় পরিণত হতে যাচ্ছে। ঢাকার মতো মেগা সিটিতে এই ধরনের কার্যক্রম শুধু সরকারি আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য। সবার সহযোগিতায় এ কার্যক্রম সফল হতে পারে।