সুন্দরবনে নতুন মাছের সন্ধান

সাধারণ পটকা মাছের (বাঁয়ে) চেয়ে দেখতে বড় আকৃতির এই মাছটির নাম বিজ্ঞানীরা রেখেছেন ‘বড় জালি পটকা’। সুন্দরবনের দুবলারচরে পাওয়া গেছে মাছটি।  ছবি: সংগৃহীত
সাধারণ পটকা মাছের (বাঁয়ে) চেয়ে দেখতে বড় আকৃতির এই মাছটির নাম বিজ্ঞানীরা রেখেছেন ‘বড় জালি পটকা’। সুন্দরবনের দুবলারচরে পাওয়া গেছে মাছটি। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর মোট ৮৭ লাখ প্রাণীর সঙ্গে আরেকটি নতুন প্রাণ যোগ হলো। পটকা–জাতীয় মাছের ওই প্রজাতির বসবাস রয়েছে একমাত্র সুন্দরবনে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী আহসান হাবীবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক মাছটি আবিষ্কার করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মেরিন ইকোসিস্টেম রিসার্চ সেন্টারের তিনজন গবেষক এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 

 সুন্দরবনের দুবলারচর এলাকার আলোর কোলে পাওয়া গেছে মাছটি। এর বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গোপসাগরের নামানুসারে, ‘চেলেনোডনটপস বেঙ্গালেনসিস’। এর গায়ের রং কালচে ও জালের মতো ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা তাই এর বাংলা নাম রেখেছেন ‘বড় জালি পটকা’। সুন্দরবনের জেলেদের জালে কালেভদ্রে মাছটি দেখা যেত। তাঁরা একে বড় পটকা নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা এটি খেতেন না। তাই ধরার পর ফেলে দিতেন বলে সুন্দরবনের জেলেরা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক কাজী আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাত্র দেড় বছর মাঠপর্যায়ে কাজ করে আমরা সুন্দরবনের জন্য তো বটেই, বিশ্বের জন্য নতুন একটি প্রজাতি খুঁজে পেলাম। নতুন এই আবিষ্কার বিশ্বের মৎস্যবিজ্ঞান গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

২০১৬ সালের মে থেকে ২০১৭–এর ডিসেম্বরের মধ্যে সুন্দরবনে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালিয়ে বিজ্ঞানীরা মাছটি খুঁজে পান। এতে আর্থিক সহযোগিতা করে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়সু কোরিয়া ফাউন্ডেশন। আর কারিগরি সহযোগিতা দেয় কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব ওশান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। সমুদ্রবিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ওশান সায়েন্স–এ নতুন প্রজাতির এ মাছ আবিষ্কারের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মৎস্য গবেষক মো. নিয়ামুল নাসের প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মাছের তালিকায় নতুন একটি নাম যুক্ত হলো, এটা অবশ্যই একটি সুসংবাদ। এর আগেও দেশের পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকায় বেশ কয়েকটি নতুন মাছের সন্ধান আমরা পেয়েছি। তবে সুন্দরবনের ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই নতুন একটি ঘটনা।’

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় প্রাপ্ত মাছের প্রজাতির মোট সংখ্যা ৪৪২। আর নদীতে থাকা স্বাদুপানির মোট প্রজাতির সংখ্যা ২৬৫। পটকা–জাতীয় মাছের মধ্যে স্বাদুপানিতে পাওয়া যায় ২টি প্রজাতি আর সমুদ্রে ২৬টি প্রজাতি পাওয়া গেছে। এখন এই তালিকায় নতুন আরেকটি মাছ যুক্ত হলো। পটকা মাছে বিষাক্ত কিছু উপাদান থাকায় এটি বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত খায় না। কিন্তু জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে এটি খুবই জনপ্রিয় মাছ। এই মাছ কাটার একটি বিশেষ পদ্ধতি আছে, যা অনুসরণ করলে তাতে বিষাক্ত উপাদান দূর করা যায়।