সুবিধা জানেন না, নারীরা ব্যবহার করেন কম

চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। গতকাল পান্থকুঞ্জ পার্কসংলগ্ন গণশৌচাগারে।  প্রথম আলো
চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। গতকাল পান্থকুঞ্জ পার্কসংলগ্ন গণশৌচাগারে। প্রথম আলো

আধুনিক গণশৌচাগার তৈরির উদ্দেশ্য ছিল, নারীদের গণশৌচাগার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা। কিন্তু সব ধরনের ব্যবস্থা রাখার পরও নারীরা এসব শৌচাগার কম ব্যবহার করেন।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় রাজধানীতে ২৮টি আধুনিক গণশৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। এসব শৌচাগারে নারী ও পুরুষের পৃথক ব্যবস্থা আছে। নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। তবে নারীদের এসব শৌচাগার ব্যবহারের হার অনেক কম।

বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণশৌচাগার সম্পর্কে পূর্ব ধারণা, নিরাপত্তাহীনতা ও অনভ্যস্ততার কারণে তাঁরা ব্যবহার করেন না। নতুন শৌচাগারগুলোতে যে অনেক সুযোগ–সুবিধা আছে, তা–ও জানেন না অনেকে। এমনকি সিসি ক্যামেরা থাকার পরও তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন না।

গত সোমবার দুপুরে পান্থকুঞ্জের গণশৌচাগারের প্রবেশ ফটকের ভেতরে এক ভাসমান দম্পতিকে খাবার খেতে দেখা যায়। সেখানে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপরই নানান বয়সী পুরুষ এসে শৌচাগার ব্যবহার করছেন। এর জন্য প্রত্যেককে খরচ করতে হচ্ছে ৫ টাকা করে। কিন্তু এ সময়ে কোনো নারীকে আসতে দেখা যায়নি।

শৌচাগারে রাখা টালি খাতায়ও দেখা যায় একই চিত্র। দেখা যায়, সোমবার সকাল ছয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ২০৫ জন পুরুষ শৌচাগার ব্যবহার করেছেন। একই সময়ে নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ৭ জন। আবার গত এক বছরে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ হাজারেরও কম। অর্থাৎ মোট ব্যবহারকারীর মাত্র ৭ শতাংশ নারী। ফার্মগেট ও ইন্দিরা রোড গণশৌচাগারেও এমন প্রবণতা দেখা গেছে।

একশনএইড বাংলাদেশের ‘নারী সংবেদনশীল নগর-পরিকল্পনা’ শিরোনামের জরিপের তথ্য বলছে, নানা কারণে রাজধানীর নারীদের ৯৪ শতাংশই গণশৌচাগার ব্যবহার করেন না। তাঁদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ নারী গণশৌচাগারে যান না নিরাপদ বোধ না করার কারণে। প্রায় একই সংখ্যক নারী বলছেন, রাজধানীতে গণশৌচাগার পর্যাপ্ত নয়। ৯২ শতাংশ মনে করেন, শৌচাগার অস্বাস্থ্যকর ও ব্যবহার উপযোগী নয়। জরিপটি ২০১৭ সালে প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি-পেশার ২০০ জন নারী এতে অংশ নেন।

গত সোমবার কথা হয় হামিদা আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি কাজ করেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এক প্রশ্নের জবাবে এই নারী বলেন, গণশৌচাগারের পরিবেশ ভালো নয়, এ জন্য তিনি তা ব্যবহার করেন না।

নতুন তৈরি করা শৌচাগারগুলোর সুযোগ–সুবিধা সম্পর্কে জানালে হামিদা আক্তার বলেন, তিনি তা জানতেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শহরের বেশির ভাগ গণশৌচাগারই ময়লা–দুর্গন্ধে ভরা, সিটকিনি ও পানি থাকে না—এমন অভিজ্ঞতার কারণে বাসার বাইরে শৌচাগার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একধরনের সংকোচ–অনভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। আবার শৌচাগার স্বাস্থ্যসম্মত হলেও নানা কারণে ব্যবহার করাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়।

স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি এলিফ্যান্ট রোডের একটি বিপণিবিতানে কাজ করেন। পড়াশোনা ও কাজের জন্য তাঁকে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকতে হয়। কিন্তু খুব প্রয়োজন না হলে শৌচাগারে যান না। বাইরে থাকা অবস্থায় পানিও কম খান তিনি। মিরপুরের বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ‘পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করা নিরাপদ মনে হয় না। ভয় করে। কখন কী ঘটে বলা যায় না।’ যাতে বাইরের শৌচাগার ব্যবহার করতে না হয় এ জন্য কোথাও বের হওয়ার আগে থেকেই পানি খাওয়া বন্ধ করে দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, নারীদের ব্যবহার বাড়াতে আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত গণশৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। সেখানে নারীদের শৌচাগার ব্যবহারে সংকোচ থাকা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, শৌচাগারের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা তৈরি করা হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো শ্রেণির নারীর ব্যবহার উপযোগী করে শৌচাগারগুলো তৈরি করা হয়েছে। এখানে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোসহ নারীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা আছে। সংকোচ ফেলে নারীদের এসব শৌচাগার ব্যবহার করা উচিত।