ঢাকার সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা: রিমান্ডে ১০, কারাগারে ৪

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্র ও মারধরের ঘটনায় করা পৃথক চারটি মামলায় রাজধানীতে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল বুধবার তাঁদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। এর আগে আজ বৃহস্পতিবার এসব আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত ও পুলিশ সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার করা আসামিদের অধিকাংশ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী।

মোহাম্মদপুর থানায় করা অস্ত্র মামলায় ছয়জনকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আর টিকাটুলীর সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুজনের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আর হাজারীবাগ থানায় করা মারধরের মামলায় দুজনকে এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া দারুসসালাম থানায় করা মারধরের মামলায় তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে, অস্ত্র মামলায় হাতিরঝিল থানার এক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মোহাম্মদপুরের ৬ জন
২৯ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সামিউল আলিম চৌধুরী বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় সামিউল দাবি করেন, ২৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে তাঁর স্ত্রীসহ কয়েকজন কর্মী ভোটার স্লিপ বাছাইয়ের কাজ করছিলেন। তখন আসামি শাকিল ইসলাম রাব্বির নেতৃত্বে ৬০ থেকে ৭০ জন তাঁর কার্যালয়ে আসেন এবং তাঁর কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এ সময় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। স্ত্রীসহ অন্যরা বাধা দিলে আসামি রাব্বি একটি রিভলবার বের করেন। তাঁর স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে শাকিল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘নির্বাচন করার শখ মিটিয়ে দেব।’ এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র, গুলি, চাপাতি ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ছয় আসামি হলেন শাকিল ইসলাম, মেহেদী হাসান, মো. রিপন, ইমরান হোসেন, গৌতম রায় ও সাইদুল ইসলাম। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অপূর্ব কুমার বর্মণ আসামিদের ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত তাঁদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

দারুসসালামের ৩ জন
দারুসসালাম থানায় করা মারধরের মামলার বাদী জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি দারুসসালাম থানার ১২ নম্বর ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মুরাদ হোসেন। তাঁর প্রতীক ঘুড়ি। গতকাল বিকেলে ২৩ জন আসামি তাঁদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। নূর হোসেন নামের একজন কর্মীকে মারধর করে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেন। ওই মামলায় দারুসসালাম থানার পুলিশ তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে পাঠায়। ওই তিন আসামি হলেন শাহীন শাহ, ইমন ও মানিক দেওয়ান।

হাজারীবাগে ২ জন
হাজারীবাগ থানায় করা মারধরের মামলায় দুজনকে আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রয়েল জিয়া। মামলার বাদী মো. বাবু বলেন, তিনি হাজারীবাগ থানার ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্বাচনী প্রচারের কাজ শেষে অবস্থান করছিলেন গণকটুলীর বিডিআর কাঁচাবাজারের সামনে। তখন হাজারীবাগ থানা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়ার নেতৃত্বে তাঁর ওপর হামলা করা হয়। রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা সবাই বিএনপির সমর্থিত। কারাগারে পাঠানো দুই আসামি হলেন আক্তার আহাম্মেদ ও আশরাফ আলী।

ওয়ারীতে ২ জন
রাজধানীর টিকাটুলীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচারের সময় সংঘর্ষের ঘটনার মামলায় আরও দুজনকে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। দুই আসামি হলেন আনিসুর রহমান ও জাফর ইকবাল। এ নিয়ে এই মামলায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

গত রোববার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচারের সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মাকসুদ আহমেদ নামের একজন বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় মামলা করেন। মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামিরা বিএনপির নেতা-কর্মী।

আরিফুলের রিমান্ড চায় পুলিশ
গোপীবাগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিবর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরিফুল ইসলামকে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। ঢাকার সিএমএম আদালত আগামী ২ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আদালত আরিফুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।