সুন্দরবনে ফের মিলল বাঘের মরদেহ

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছাপড়াখালী এলাকা থেকে গত ২০ আগস্ট এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ। ফাইল ছবি
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছাপড়াখালী এলাকা থেকে গত ২০ আগস্ট এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ। ফাইল ছবি

সুন্দরবনের কোকিলমনি এলাকা থেকে একটি বাঘের মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমনি টহল ফাঁড়ির অন্তর্গত কবরখালী এলাকায় বাঘের মরদেহটি দেখতে পাওয়া যায়।

বন বিভাগ জানায়, সকালে বনের ওই এলাকায় টহলের সময় বন বিভাগের কর্মীরা কবরখালী খালের পাশে একটি বাঘের পচন ধরা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। বাঘটির পেছনের অর্ধেক অংশ নেই, যা কুমিরে খেয়ে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস আগে গত ২০ আগস্ট বনের একই রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যের ছাপড়াখালী বনাঞ্চল থেকে একটি বাঘের মরদেহ উদ্ধার করেছিল বন বিভাগ। ওই বাঘটিরও স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি করে বন বিভাগ।

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন রাতে মোবাইলে প্রথম আলোকে বলেন, বাঘটির পেছনের অংশ পচে গেছে। অনেকটা অংশ নেই। মনে হচ্ছে মৃত বাঘটির পেছনের অংশ কুমিরে খেয়ে ফেলেছে। এটি হয়তো চার থেকে পাঁচ দিন আগে মারা গেছে।

এসিএফ জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, একদম খালের পাশেই বাঘের মৃতদেহটি পড়ে ছিল। জোয়ারের সময় খালের ওই অংশ মোটামুটি পানির নিচেই থাকে। বাঘটিকে উদ্ধার করে কোকিলমনি টহল ফাঁড়িতে নেওয়া হচ্ছে। বার্ধক্যজনিত কারণে বাঘটির মৃত্যু হয়েছে বলেও ধারণা ওই কর্মকর্তার।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, বাঘটির পেছনের অংশ না থাকায় বাঘটি পুরুষ না নারী ছিল তা বোঝা যাচ্ছে না। কাল মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে বাঘটিকে বনের ওই এলাকায় মাটিচাপা দেওয়া হবে।

সুন্দরবন এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘের গড় আয়ু ১৪ থেকে ১৬ বছর, বলছে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

২০১৫ সালের বাঘশুমারিতে ১০৬টি বাঘ থাকার কথা জানা গিয়েছিল। ২০১৮ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪ হয়েছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, সুন্দরবনে যে অঞ্চলগুলোয় বাঘের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি, এমন ১ হাজার ৬৫৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ‘ক্যামেরা ফাঁদ’ পদ্ধতিতে জরিপ চালানো হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় ১ হাজার ২০৮ বর্গকিলোমিটার, খুলনায় ১৬৫ বর্গকিলোমিটার ও বাগেরহাটের শরণখোলায় ২৮৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে জরিপে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছিল।

বাঘশুমারির এই পদ্ধতিতে ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ চলাচল করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি উঠে যায়। পরে এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। সর্বশেষ এই জরিপে সুন্দরবনের ২৩৯টি জায়গায় গাছের সঙ্গে ৪৯১টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। ২৪৯ দিন ধরে চালু রাখা ক্যামেরাগুলোয় বাঘের আড়াই হাজার ছবি পাওয়া যায়। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ১১৪টি বাঘ থাকার কথা অনুমান করছেন।