দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ছিনতাই, রিমান্ডে ২ জন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তার পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের দুজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) আজ রোববার এই আদেশ দেন।

দুই আসামি হলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার শশা গ্রামের আবদুল খালেক কাজীর ছেলে আবদুর রাজ্জাক (৪৫) ও ফরিদপুরের নগরকান্দার কাজী শাহীন ওরফে সায়েম (৪৩)।

এর আগে গতকাল শাহ আলম নামের এক আসামি দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঢাকার সিএমএম আদালতে জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এস এম আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ছিলেন সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের ছয়জন সদস্য। তাঁদের নাম জানা গেছে। শাহ আলম নামের আসামি সব ঘটনা খুলে বলেছেন। দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মামলার কাগজপত্র এবং তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার ডিওএইচএসের বারিধারা বাইপাস রোডে দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাল্টিন্যাশনাল ওএসজি সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ইশতিয়াক আহমেদ মামলা করেন।

মামলার এজাহারে ইশতিয়াক বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ক্যাশিয়ার শফিকুল ইসলাম ও গাড়ির চালক শামীম তাঁদের সহযোগী তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট সাড়ে ১৩ লাখ টাকা তোলেন। এরপর গাড়িতে করে তাঁরা অফিসে ফিরছিলেন। তাঁরা যখন ডিওএইচএস বারিধারা বাইপাস রোডে আসেন, তখন পেছন থেকে অজ্ঞাত একটি মাইক্রোবাস আসে। তাঁদের দুই কর্মচারীকে বহনকারী প্রাইভেট কার গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে তিনজন লোক গাড়ি থেকে নেমে নিজেদের দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। কর্মচারীদের উদ্দেশে তাঁরা বলেছিলেন, ‘গাড়িতে অবৈধ মালামাল আছে। গ্রেপ্তার করবে।’ তখন ক্যাশিয়ার শফিকুল ও চালক শামীমকে প্রাইভেট কার থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে আসামিদের গাড়িতে তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে গামছা দিয়ে তাঁদের চোখ বেঁধে ফেলেন। আসামিদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মারধর করে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর ক্যাশিয়ার শফিকুল ও চালক শামীমকে কাঞ্চন সেতুর কাছ নামিয়ে দেন আসামিরা।

মামলার বাদী ইশতিয়াক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের পেশাদার অপরাধীরা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের দুজন কর্মকর্তাকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছেন। তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। টাকা এখনো উদ্ধার হয়নি।

ক্যান্টনমেন্ট থানা-পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদক পরিচয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত আসামিরা অভ্যাসগত পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়া আসামি শাহ আলমের বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ সালে মতিঝিল থানায় মামলা হয়েছিল। রিমান্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট ও শেরেবাংলা নগর থানায় পৃথক দুটি মামলা রয়েছে। একটি মামলা মাদকের, অপরটি প্রতারণার।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এস এম আবু রায়হান বলেন, দুদক পরিচয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার আট থেকে নয় দিনের মাথায় আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে আরও ছয়জন ছিনতাইকারীর নাম। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আছেন চারজন আসামি।

পুলিশ কর্মকর্তা আবু রায়হান জানান, দুদক পরিচয়ে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি আসামিদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়েও ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেছিলেন আসামিরা। প্রত্যেক আসামি পেশাদার অপরাধী। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।