বরিশালে আশ্রয়কেন্দ্রে লক্ষাধিক মানুষ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গতকাল মঙ্গলবার আশ্রয় নেন অনেকে।ছবি: প্রথম আলো
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গতকাল মঙ্গলবার আশ্রয় নেন অনেকে।ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেন। রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর হালকা দমকা হাওয়া বইতে থাকায় বিভিন্ন এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যান। লক্ষাধিক মানুষ জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় নেন। আজ বুধবার সকালে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারির পর বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে মেঘলা ও ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করছে।

বরিশার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ১০টি উপজেলায় গতকাল এক হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে গতকাল রাত ১১টার মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার ২৮৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগতদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব নিশ্চিতের বিষয তদারকি করছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবারের পাশপাশি রান্না করা খিচুড়ি এবং অন্যান্য খাবারও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানির জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে।

সদরের ক্ষুদ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া আলেয়া বেগম বললেন, 'আগে আশ্রয়কেন্দ্রে যে যহন খুশি অ্যায়া পছন্দ অয় জাগায় থাকতে পারকে। এবার নিয়ম বেশি কড়া। স্যারেরা হাত-মুখ সাবান দিয়া না ধুইয়্যা যাইতে দেয় না। আবার মধ্যে ইচ্ছামতো থাকতেও দেয় না। হ্যাগো দ্যাহাইয়্যা দেওয়া জাগায় থাকতে অইবে। সবাইর স্থান দেছে দূরে দূরে। হুনছি করোনার লইগ্গা এইবার এমন ব্যবস্থা।' আমজেদ আলী (৫৫) বললেন, 'খাওন দেছে। হ্যারপর চিড়া-মুড়ি-বিস্কুটও দেছে। আগের চাইতে ব্যবস্থা এইবার অনেক ভালা।'

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান গতকাল রাতে বলেন, গেরাকুল আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চৌকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তাঁরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেতে পারেন। এ ছাড়া খাবার, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি, শৌচাগারগুলোতে সাবান-পানি এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এবার করোনাভাইরাসের প্রভাবকে মাথায় রেখে জেলা প্রশাসনের নানা ধরনের উদ্যোগের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় জেলার ১০টি উপজেলায় এক হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে গতকাল রাত ১১টার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার ২৮৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। পাশাপাশি ২ হাজার ৪৯৯টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং পানি সরবরাহসহ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। ইউএনওরা এটা করেছেন।