করোনায় ৩৬ জেলায় ১১ হাজার পরিবারে ঘুড্ডির ত্রাণ

সারা দেশের ১১ হাজার পরিবারের কাছে ত্রাণ দিয়েছে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন। ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশের ১১ হাজার পরিবারের কাছে ত্রাণ দিয়েছে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন। ছবি: সংগৃহীত

ঘরহীন মানুষকে রান্না করে খাওয়ানো থেকে শুরু করে বেতন না পাওয়া ইমাম, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত, টিউশনি বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। গেছে এতিম খানায়। দেশের অভ্যন্তরে আটকে থাকা ৬১ ভারতীয় ট্রাক চালকও বাদ পড়েনি তাঁদের সাহায্য থেকে। সব মিলিয়ে ৩৬টি জেলায় ১১ হাজার পরিবারে তারা ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। করোনাকালে ঘুড্ডি ফাউন্ডশন নামের একটি সংগঠন থেকে দুস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণের এই আয়োজন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। ফেসবুকে ও পরিচিত মানুষদের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়েছে এই অর্থ। সব কার্যক্রমের বিস্তারিত তাঁরা ফেসবুকে প্রকাশ করেছে।

 এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের অন্যতম সংগঠক সাইফুর রহমান, এনায়েত হোসেন রাজিব ও নূর খান। তাঁরা একে অপরের বন্ধু। 

সাইফুর চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ালেখা শেষ করে দেশি-বিদেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন।নূর কানাডার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে লেখাপড়া করেছেন। ঢাকায় তিনি রাইট ব্রেইন সলিউশন নামের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের মালিক। রাজীব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে দ্য ওয়েব ল্যাব নামের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন। তিনজনই ঢাকায় থাকেন।

ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন নিয়ে আগেও প্রথম আলো প্রতিবেদন করে। তারা খুঁজে খুঁজে মেধাবীদের পশে দাঁড়ায়। তাদের বৃত্তির ব্যবস্থা করে। সাহায্য পেয়ে ওই শিক্ষার্থীরা অনেকে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়েছেন। ভালো চাকরিও করছেন।

কৃষকের কাছে গিয়ে সবজি কিনে বিতরণ করেছে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন।ছবি: সংগৃহীত
কৃষকের কাছে গিয়ে সবজি কিনে বিতরণ করেছে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন।ছবি: সংগৃহীত

ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মূলত দেশের অসচ্ছল ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত সাত শ'র বেশি ছাত্র–ছাত্রী ঘুড্ডি শিক্ষা বৃত্তি পেয়ে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ঘুড্ডি বৃত্তির আওতায় এই মুহূর্তে আছে ৩২৫ জন ছাত্র–ছাত্রী।

শিক্ষা বৃত্তির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন এগিয়ে এসেছে নিয়মিত। রানা প্লাজা ধসের মতো দুর্ঘটনাসহ প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গী হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ শে মার্চ থেকে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন কাজ শুরু করোনার প্রভাবে নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য সামান্য খাওয়ার ব্যাবস্থা করার লক্ষ্য নিয়ে।

ঘুড্ডির ফাউন্ডেশনের ভলান্টিয়ার হচ্ছেন ঘুড্ডির বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রাক্তন ছাত্র–ছাত্রী। যেহেতু সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই এই সকল ছাত্র–ছাত্রী এখন নিজ নিজ গ্রামে অবস্থান করছেন।

প্রথমেই ঘুড্ডির নিজস্ব ভলান্টিয়ারদেরকে খোঁজ নিতে বলা হয়, নিজ গ্রাম ও আশেপাশের গ্রামে কী পরিমাণ পরিবার আছে, যাঁরা এখনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি এবং খাদ্য সংকটে আছে।

করোনায় ত্রাণ দিচ্ছেন যেভাবে

সাইফুর রহমান বলেন, আমাদের মূল টার্গেট গ্রপ ছিল, দিনমজুরদের সহায়তা করা। যারা আগে কাজ করত। কিন্তু এ সময় বেকার, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, বিধবা, রিকশা ও ভ্যানচালক।

এভাবে স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রথমে খোঁজ নিয়ে তালিকা তৈরি করে। তারপর প্রতি পরিবারের জন্য বাজার করে প্যাকেট করে। এতে ছিল, চাল ৫ কেজি, আলু ৩ কেজি, ডাল আধা কেজি, ১ টি চাল কুমড়া, ১ টি মিষ্টি কুমড়া, ২ কেজি ঢ্যাঁড়শ, ১ কেজি করলা বা টমেটো, ১ টি লাউ।

সাইফুর বলেন, একটি ঘটনা বলি। আমাদের কাজের এক ফাঁকে আব্দুল হাকিম নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক খোঁজ আনল হিন্দু পাড়া, গোবিন্দপুর, খোকশাবাড়ি, নিলফামারী এলাকায় ৫৩ টি হিন্দু পরিবার প্রতি বেলায় সিদ্ধ মিষ্টি কুমড়া খেয়ে দিন পার করেছে। খোঁজ পাওয়ার পরে এই ৫৩ টি পরিবারকে ১ সপ্তাহের বাজার করে দিয়ে আসা হয়েছে। এভাবে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে ঘুড্ডির ছোঁয়া পৌঁছে গেছে ৩৬ টি জেলায়।

রাস্বায় থাকা ভাসমান মানুষকে খাবার রান্না করে দিয়েছে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন।ছবি: সংগৃহীত
রাস্বায় থাকা ভাসমান মানুষকে খাবার রান্না করে দিয়েছে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন।ছবি: সংগৃহীত

 সাইফুর বলেন, 'রাতের আঁধারে বাজারের প্যাকেটগুলো পৌঁছে দিয়ে আসা হয়েছে মানুষের কাছে। এ সময় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার মূল কারণ দুটি। আমরা জটলা এড়াতে চেয়েছি। ভিড়ে করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। যেহেতু আমাদের সামর্থ্য সীমিত, তাই আমরা চাইছিলাম রাতের অন্ধকারে নীরবে কাজটি সারতে, যাতে অন্যদের চোখে না পড়ে। এ পর্যন্ত ১১ হাজার পরিবারের কাছে এই প্যাকেট পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ঠাকুরগাঁও শাখার ম্যানেজার কামরুল হাসান বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন যখন ত্রান দেয় সেখানে আমি ছিলাম। ওদের একটা নীতিমাল আছে। খুব গরীব না হলে দেওয়া হবে না। তারা সেই নীতিমালা মেনেই ত্রান দিয়েছে। আসলে সত্যিকারের যাদের ত্রান প্রয়োজন তাঁরাই সাহায্য পেয়েছে। ওদের মানুষের প্রতি ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ হয়েছি।

কৃষক ও এতিমসহ নানা মানুষকে ত্রাণ

ঘুড্ডির এনায়েত হোসেন রাজিব বলেন, ‘আমরা জানি এই ১১ হাজার সংখ্যাটি একটি দেশের তুলনায় কিছুই না। কিন্ত আমরা শুধুমাত্র আমাদের স্বল্প সামর্থ্য থেকে যতটুকু করা যায়, তার চেষ্টা করেছি মাত্র।একদম সরাসরি কৃষকের খেত থেকে সবজি কেনা হয়েছে।কিছু কিছু জায়গায় এমনও হয়েছে, কৃষক ন্যায্য দাম না পাওয়ায় রাগে–দু:খে করলা বিনা পয়সায় দিয়ে দিচ্ছিল বা ফেলে দিচ্ছিলেন। আমরা কৃষকের খেতেরর সব করোলা ৫ টাকা কেজিতে কিনেছি। যে লাউ কৃষক চাইছিলেন ৪ টাকা করে, সেই লাউ বাজারের ব্যাবসায়ীরা কিনতে চাইছিলেন ১ টাকা বা ২ টাকায়। আমরা সেই লাউ প্রতিটি সাড়ে ৫টাকা করে কিনেছি। এভাবে প্রত্যেকটি ফসলই আমরা কৃষকের চাওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে কিনে ট্রাকে ট্রাকে সবজি এক জেলা থেকে আরেক জেলায় পাঠিয়েছি। এই সবজিগুলো চাল–ডাল–আলুর সঙ্গে প্যাকেট করে ১১ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁঁছে দেওয়া হয়েছে।'

বোদা থানা ব্যাংহাড়ি ইউনিয়নের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, সব করলা, বেগুন, শশা,  লাউ। নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু ঘুড্ডির সদস্যরা তা ন্যায্য দামে কিনেছে। না হলে লস হয়ে যেত। এতে আমাদের অনেক উপকার হয়। তারা করলা, লাউ ১২ টাকা করে বেগুন ৯ টাকা করে কিনেছে। ওই সময় সবজির দাম ছিল চার থেকে পাঁচ টাকা। বাজার বসতো না। লোকও কম ছিলো বলে সবজি খেতেই নষ্ট হচ্ছিলো।ওরা কেনাতে অনেক উপকার হয়েছে।

এনায়েত হোসেন জানান, এই ত্রাণ কার্যক্রম চলাকালে তাঁরা খবর পেলেন, প্রত্যন্ত এলাকার সম্মানিত ঈমাম ও মুয়াজ্জিনেরা পরিবার নিয়ে খাওয়ার কষ্টে আছেন। করোনার কারনে মক্তব বন্ধ, তাই তাদের আয়ও বন্ধ। মসজিদে কেউ না আসায় দানের টাকাও নেই। তিনি বলেন, ‘এভাবে ২৮৮ জন ঈমাম ও মুয়াজ্জিনের তালিকা করে প্রত্যেকট পরিবারকে ১ মাসের বাজার করে দিয়ে এসেছি। এছাড়া ৭ জন হিন্দু পুরোহিতকে ১ মাসের বাজার করে দেওয়া হয়।’

ত্রাণের খাবার যাচ্ছে জেলায় জেলায়। ছবি: সংগৃহীত
ত্রাণের খাবার যাচ্ছে জেলায় জেলায়। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নেরর বটতলা ক্লাব জামে মসজিদ ইমাম মো.  আবদুর রহিম আলী বলেন, কোথায় থেকে যেন ওই ছেলেরা খবর পেয়েছে আমরা ভালো নাই। তখন এসে আমি ও আমার পাশের দুই মসজিদে নগদ টাকা ও ত্রান দিয়ে গেছে। আমাদের অনেক উপকারে এসেছে।

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার তাতী পাড়া গ্রামের রহিদাস রায় আগে হিন্দুদের ধর্মীয় গান, অনুষ্ঠান করতেন। এখান থেকেই উপার্জন হতো। করোনার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, আয় রোজগার বন্ধ খুব কষ্টে দিন পার করছিলাম। পরে আমাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ঘুড্ডির সদস্যরা। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

এসব কাজে ঘুড্ডির স্বেচ্ছাসেবকেরা সহায়তা করেন। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর উদাহরণ তুলে ধরেন  এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন,‘আমাদের ভলান্টিয়ারদের ব্যাপারে দুটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। লিটন রায় শিবু নামের হিন্দু ছেলেটি পড়াশুনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে আমাদের মেসেজ দিয়ে জানায়, তার নীলফামারী এলাকার ৫ জন ঈমাম–মুয়াজ্জিন খুব কষ্টে দিন পার করছেন পরিবার নিয়ে। আবার আব্দুল আজীজ নামের মুসলিম ছেলেটি পড়াশোনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে খবর আনে, তার পঞ্চগড় এলাকায় ৩ জন হিন্দু পুরোহিতের ব্যাপারে, যারা দেশের লকডাউনের এই সময় খুব কষ্টে দিন পার করছে। এখানে উল্লেখ্য, লিটন রয় সিবু এবং আব্দুল আজীজ –দুজনই ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের বৃত্তি প্রাপ্ত প্রাক্তন ছাত্র।’ এসব সহায়তার বাইরে ১২ টি এতিমখানায় ঘুড্ডি থেকে বাজার করে দিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান এনায়েত হোসেন।

গরিব ছাত্র ও অসহায়দের পাশে ঘুড্ডি

ঘুড্ডির পক্ষ থেকে প্রাক্তন ১০০ ছাত্র–ছাত্রীর পরিবারকে ১ মাসের বাজার করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তারা বিশ্ববিদ্যালয়–মেডিকেলের ছাত্র এবং তাদের মুল আয় টিউশনি। করোনার সময়ে তাদের আয় বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে সমস্যায় দিন কাটাচ্ছিল। তারই জন্য এই ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা জানি, আমরা কাজে দক্ষ না। সব সময় নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যেমন, ঝিনাইদহের শৈল্কুপায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর মধ্যে ৬ টি পরবারের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল।

এদেরকে ১০ দিনের বাজার করে দিয়ে আসা হয়। সাথে রান্না করে খাওয়ার জন্য হাড়ি-পাতিলও কিনে দিয়ে আসা হয়। কারণ রান্না করার সব উপকরনও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।

ভারতীয় ট্রাক চালকদের পাশে

কিছু ঘটনা না বললেই নয়। ভারত-বাংলাদেশ দুটো দেশেই লক ডাউনের কারনে স্থল বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয় হুট করে ৪ঠা এপ্রিল। তাই ভারত থেকে পাটবীজ নিয়ে আসা কিছু ট্রাক চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে আটকা পড়ে। ফলে এক কাপড়ে আসা ৬১ জন ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার এদেশে আটকে পরে । এদের সাথে আর কোন কাপড়ও ছিল না। স্থানীয়রা এদেরকে লুংগী কিনে দেয়। এই মানুষগুলো আক্ষরিক অর্থেই বন্দী। চারদিকে ঘেরা ঘরের বাইরে তারা যেতে পারেন না।ভিতরেই রান্না করতে হয়,ঘুমাতে হয় ট্রাকে।

কেনাকাটা করতে হলে এদেশের কাউকে ডেকে টাকা দিলে তারা কিনে নিয়ে গিয়ে দেন। বুড়িমারি পোর্টে সবকিছু আবার সহজলভ্যও নয়। রমজান শুরু হওয়াতে মুসলিম ড্রাইভাররা রোজা রাখতেছেন। কিন্তু ইফতারির বিরাট সমস্যা। সকালে নাস্তা করারও তেমন কোন বন্দোবস্ত নেই। একটা কাঁটা তারের বেড়া মানুষগুলোকে নিজের সন্তান পরিবার থেকে আলাদা করে রেখেছে দীর্ঘ ২২ দিন ধরে।

ঘুড্ডির অর্থায়নে খাবার চাল,ডাল,তেল,আলু সহ কাঁচাবাজার আর রোজাদারদের জন্য খেজুর সহ সবার জন্য চিরা,বিস্কিট ও গুড় দেয়া হয়। এই কাজে পুর্ণ তদারকি করেছেন স্বেচ্ছাসেবক মন্ডল ভাই। উনি নিজে বর্ডার এলাকায় গিয়ে সব চেক করে, তারপর খাওয়া কিনে দিয়ে এসেছেন।

ঘরহীনদের জন্য রান্না করা খাবার

ত্রাণের পাশাপাশি দেশের ৩ এলাকায় প্রতিদিন রান্নার আয়োজন করা হয়।দিনাজপুর সদর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, গোবিন্দপুর, খোকশাবাড়ি, নীলফামারীতে প্রতিদিন গড়ে ৭৫০ জনের রান্না করা খাওয়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এসব জেলার বিভিন্ন স্টেশনের ভাসমান মানুষ, প্রতিবন্ধী, রিকশাভ্যান চালকদের মাঝে খাবার দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার মানুষকে রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে। রান্নার তালিকায় ছিল খিচুড়ি, ডিম, মুরগির তেহারি, ভাত, সবজি, ডাল।

সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষক হাফিজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন আমাদের এলাকায় ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন ব্যপক ত্রান কার্যক্রম চালিয়েছে। গরীব লোকেদের দান করেছে। রান্না করে খাওয়ার ব্যাবস্থা করেছে। ওরা গরীব ছাত্রদের বৃত্তিদেয় তখনও আমার সাহায্য নেয়। ওরা অনেকটা প্রচার বিমুখ তাই ওদের কাজ আমার ভালো লাগে।

স্বেচ্ছাসেবকদের সততা

এনায়েত হোসেন বলেন,আমাদের ভলান্টিয়ার সবাই হিসেবের ব্যাপারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করেছে। ঘুড্ডির বড় ভাইদের সাথে পরামর্শ করে পই পই টাকা তারা গুনে এবং হিসেব করে খরচ করেছে। প্রায়ই আমাদের কাছে এরকম মেসেজ এসেছে: “ভাই, ১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ত্রানের জন্য। বাজার করে সব রাতের বেলায় পৌঁছে দিয়েছি মানুষের বাড়িতে। কিন্তু হিসেব করে দেখি এখনো আমার হাতে ৬ টাকা রয়ে গেছে। এই ৬ টাকা কি করবো?”

যেহেতু ঘুড্ডির কোন বেতনভুক্ত কর্মচারী নেই। সবাই ভলান্টিয়ার। তাই যারাই কাজ করেন এখানে, কেউ টাকার জন্য কাজ করেন না। মনের তাগিদেই কাজ করেন। ভালবাসা থেকেই কাজ করেন। ফলে, ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনে জমার প্রতিটি টাকাই মানুষের পেছনে ব্যায় হয়।

শত শত স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে ২ জন ভলান্টিয়ার আছে, যারা নিজ নিজ এলাকায় নেতৃত্ব দিয়েছে, কিন্তু এরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এরা ২ জনই ঘুড্ডির প্রাক্তন ছাত্র–ছাত্রী। মো. মমিনুর ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আর সুমাইয়া আক্তার মিতু। ছেলেটি লালমনিরহাটে এবং মেয়েটি জয়পুরহাটে ত্রান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে দক্ষতার সাথে, যদিও এরা মোটেই চোখে দেখে না।

সাইফুর বলেন, 'আমরা বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজনে বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের সাহায্য নিয়েছি সুষ্ঠুভাবে ত্রাণের কাজ সম্পন্ন করতে।

২৩ শে মে আমাদের ঘুড্ডির ত্রাণ কার্যক্রম সমাপ্ত করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ, এসএসরসি রেজাল্ট দিচ্ছে আর কিছু দিন পরেই। এর পর পরই আমাদের শিক্ষা বৃত্তির আবেদনপত্র গ্রহণ ও বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে।'

যেকোন ব্যক্তি নিজ এলাকার এসএসসি ২০২০ পাস কোনো অসচ্ছল ছেলেমেয়ের বিষয়ে নিচের লিংকে ঢুকে আবেদন করতে বলতে পারবেন।

ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের ব্যাপারে জানা যাবেঃ www.facebook.com/ghuddifoundation

ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন শিক্ষা বৃত্তির ব্যাপারে জানা যাবেঃ www.facebook.com/educationforallbd

আরও পড়ুন: