নীরব ঢাকায় পাখির কাকলি

বসন্তবৌরি তাকিয়ে আছে টকটকে লাল বটফলের দিকে।  ছবি: লেখক
বসন্তবৌরি তাকিয়ে আছে টকটকে লাল বটফলের দিকে। ছবি: লেখক

ঢাকা বিমানবন্দরের পাশে ছোট্ট একটি বটগাছ। গাছভরা পাকা ফল। ফলভুক পাখিদের অতি প্রিয় খাবার। একসঙ্গে দেখা মিলল শতাধিক কমলা বুক হরিয়ালের। ঢাকায় একসঙ্গে এত হরিয়াল? অভাবনীয় দৃশ্য। গাছটিতে কয়েকটা বসন্তবাউরি আর এশীয় কোকিলের ছোটাছুটিও চোখে পড়ল। করোনাকালে জনশূন্য এই জায়গায় পাখিদের মেলা বসেছে যেন।

আমার জানালা দিয়ে এখন দুটি পাখির বাসা দেখা যায়। একটি বুলবুলির, আরেকটি পাকড়া শালিকের। বাচ্চাও ফুটেছে তাদের। বাচ্চাগুলোর খাবারের খোঁজে মা-বাবা সারাক্ষণ ছোটাছুটি করে। খাবার পেলে এনে বাচ্চাদের মুখে তুলে দেয়। দেখার মতো দৃশ্য। এ সময় যাঁরা ঘরবন্দী, তাঁরা বাইরে তাকান। দেখা মিলবে কাক, শালিক, দোয়েল, বুলবুলি, কোকিল বা কোনো না কোনো পাখির বাসা।

বাংলাদেশের আবাসিক পাখির প্রজনন মৌসুম গ্রীষ্মকাল। বেশির ভাগ পাখিই এ সময় ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়। শহুরে পাখির সবচেয়ে বড় সমস্যা বাসা বানানোর স্থান। ঢাকা শহরে কিছু পাখির জন্য বেশ ভালো খাবার আছে। কিন্তু বাসা বানানোর জায়গা নেই। করোনাকালে ঢাকায় পাখিদের সংসার বেড়েছে। বাসা বানানোর জায়গা প্রসারিত হয়েছে।

ঢাকায় দুর্লভ প্রজাতির পাখির তালিকাটি বেশ বড়। ঢাকার পাশে পূর্বাচলে দেখা গেছে বাদামি পিঠ লাটোরা। পুরান ঢাকার আশপাশে দেখা যায় দুই জাতের শাহিন। এ ছাড়া বুটপা ইগল, আলেকজান্দ্রীয় টিয়া, লালচে বক, হিমালয়ি গৃধিনি, ধলা গলা মানিকজোড়,
রাঙা মানিকজোড়, বুটপা ঘাসপাখিসহ বেশ কয়েক জাতের বিরল পাখি দেখার তথ্য আছে এ শহরে।

আম্পানের পর গত ২১ মে আমাদের পাখি-দেখিয়ে বন্ধু সেইথ মিলার দেখতে পেলেন ওয়েজ টেইলড সেয়ারওয়াটার নামে একটি পাখি। পাখিটি গভীর সাগরের। প্রজাতিটি মূলত প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগর সন্নিহিত অঞ্চলে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুমের জন্য এদের পছন্দ পূর্ব ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উপকূল। সাগরের পাখি ঢাকা শহরের লালমাটিয়া এলাকার ছাদ থেকে দেখা অতি বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের জন্য এটি নতুন পাখিও। ঝড়ের কারণে পথ ভুল করে চলে এসে থাকতে পারে।

ঢাকায় কোন জাতের পাখি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তা নিয়েও ভালো গবেষণা হয়েছে। ঢাকার পাখিতালিকার প্রথম নয়টি প্রজাতির পাখিই আবর্জনাভুক ও পোকাখেকো। দশম পাখি কোকিল। পরজীবী এই পাখি বাসা বানাতে কাকের বাসা ব্যবহার করে বলে গ্রীষ্মে এদের ঢাকায় বেশি দেখা যায়। প্রথম এই ১০ প্রজাতির পাখির মধ্যে মাত্র একটি ফলভুক। এ থেকেই বোঝা যায় ঢাকা শহরে গাছের কী করুণ অবস্থা! কিন্তু এই পাখিগুলো আমাদের জন্য কী আশীর্বাদ! শহরটাকে এরা পরিচ্ছন্ন রাখছে।

ঢাকা আমাদের প্রিয় শহর, অনেক প্রজাতির পাখিদেরও প্রিয়। এই প্রজনন মৌসুম ভালো গেলে এই শহরে মানুষের পাশাপাশি পাখিদের কলরবও বাড়বে বৈকি।