নদীভাঙনে ২,৩৬৫ হেক্টর এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।

বর্ষার বৃষ্টি ও উজানের পানির তোড়ে দেশের সব কটি নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সেই সঙ্গে নদীভাঙনও শুরু হয়ে গেছে। এ বছর নদীভাঙনে ২ হাজার ৩৬৫ হেক্টর এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে ১৬টি এলাকার প্রায় ২৩ হাজার মানুষ গৃহহীন হবে।

তবে এ আশঙ্কার মধ্যে ইতিবাচক খবর হচ্ছে, এক যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে নদীভাঙন কমে আসছে। একসময় তীব্র নদীভাঙনের কবলে পড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভাঙন অনেক কমে গেছে। ২০১১ সালে দেশে বছরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর এলাকা নদীভাঙনের শিকার হয়েছিল। ২০১৮ সালে তা কমে ৩ হাজার ২০০ হেক্টরে নেমে আসে। ২০১৯ সালে তা আরও কমে ২ হাজার ৬০০ হেক্টরে নেমে আসে।

তবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত মনে করেন, দেশে নদীভাঙন কমেছে, এটা নিশ্চয়ই ইতিবাচক খবর। কিন্তু এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল এই খাতে সরকার প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে নদীর তীর রক্ষায় ও বাঁধ নির্মাণে প্রচুর অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বিনিয়োগ অনুপাতে সাফল্য আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। নদীভাঙনের আশঙ্কায় থাকা এলাকাগুলোর সামনের নদীর ডুবোচরগুলো খনন করা ও বাঁধগুলো মজবুত করে বানালে ভাঙন কেন হবে—সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

পদ্মা নদীর তীরে শরীয়তপুরের নড়িয়া গত তিন বছরে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে। সিরাজগঞ্জের চৌহালী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীগ্রামেও তীব্র ভাঙন ছিল প্রতিবছর। এবার এসব এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা খুবই কম। বিশেষ করে ২০১৭ সালের সবচেয়ে আলোচিত নদীভাঙন এলাকা শরীয়তপুরের নড়িয়ায় গত বছর কোনো ভাঙনই হয়নি। এ বছরও সেখানে কোনো ভাঙনের পূর্বাভাস নেই।

সিইজিআইএসের হিসাবে, চলতি বছর যে ১৬টি এলাকায় নদীভাঙন বেশি হবে, তার মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনিকটা, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা, টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও সলিমাবাদ চরে, পদ্মা নদীর অংশে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট ও রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা এবার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়তে পারে। এসব এলাকার অনেক স্থানে ইতিমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া এ বছর জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও ফরিদপুরে নদীভাঙন হবে।

>

সিইজিআইএসের পূর্বাভাস বলছে, ওই পরিমাণ জমি বিলীন হলে ১৬টি এলাকার প্রায় ২৩ হাজার মানুষ গৃহহীন হবে

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সব এলাকার নদীভাঙন কমিয়ে আনব। নড়িয়ায় ২০১৭ সালে ৫ হাজারের বেশি ভবন ভাঙতে হয়েছে। এবার কোনো ভবন তো দূরে থাক, এক ইঞ্চি মাটিও ভাঙবে না। নড়িয়ার মতো জটিল এলাকার ভাঙন থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা অন্য এলাকাগুলোর ভাঙন রোধে প্রকল্প তৈরি করছি। আশা করি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সব ভাঙন রোধ করতে পারব।’

সিইজিআইএসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর ভাঙনের শিকার হতে পারে ৩৬৫ হেক্টর বসতি এলাকা। এ ছাড়া ৫ হাজার ৪০০ মিটার সড়ক, ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩টি হাটবাজার, ২৯টি মসজিদ, ২টি সরকারি ভবন, ১টি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয় ও ৩টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নদীভাঙনের শিকার হবে।

দেশের সব নদ–নদীর স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে ও মাঠপর্যায়ে জরিপ এবং আবহাওয়া পূর্বাভাস আমলে নিয়ে সিইজিআইএস এই ভাঙন পূর্বাভাসটি দিয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি এই গবেষণা সংস্থাটি ২০০৪ সাল থেকে পূর্বাভাস দিয়ে আসছে। সংস্থাটির পরামর্শক মমিনুল হক সরকার উদ্ভাবিত এই পূর্বাভাসের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মিলে যায়।

বাংলাদেশ সরকার ছাড়াও ভারত, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া নদীভাঙনের পূর্বাভাস পদ্ধতি ব্যবহার করা শুরু করেছে। তারা তাদের দেশেও নদীভাঙনের পূর্বাভাস দিচ্ছে।

জানতে চাইলে সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মাটির ধরন অনুযায়ী
নদীর তীরে ভাঙন একটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ঘটনা। গবেষণালব্ধ তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার করে ভাঙনরোধে অবকাঠামো তৈরি করলে ভাঙন আরও কমানো সম্ভব।