বন্যায় ২০ জেলার ধান-সবজির বিপদ বাড়ছে

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় বন্যার পানি হাঁটুসমান হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে ঘরবাড়িতে। এ অবস্থায় ঘর থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পূর্ব শংকরদহ, গঙ্গাচড়া, রংপুর, ২৮ জুন। ছবি: মঈনুল ইসলাম
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় বন্যার পানি হাঁটুসমান হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে ঘরবাড়িতে। এ অবস্থায় ঘর থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পূর্ব শংকরদহ, গঙ্গাচড়া, রংপুর, ২৮ জুন। ছবি: মঈনুল ইসলাম

আমনের বীজতলা তৈরি প্রায় শেষ, আউশ ধানে মাত্র থোড় এসেছে। ভুট্টা মাত্র রোপণ করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির অর্ধেকের বেশি এখনো মাঠে। এর মধ্যেই বন্যা শুরু হয়ে গেছে। এ কারণে মাঠে থাকা এসব ফসল নিয়ে কৃষক বিপাকে পড়েছেন।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বন্যা এরই মধ্যে ১০টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আরও ১০ থেকে ১২ দিন তা চলতে পারে। দেশের ১৮ থেকে ২০টি জেলার নিচু এলাকা এই বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। এসব জেলার কৃষকেরা ফসল নিয়ে কী করবেন, সে ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের জন্য করণীয় নিয়ে একটি বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছে।

ওই বুলেটিনে বলা হয়েছে, আমনের বীজতলা বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হলে বিকল্প হিসেবে আবারও বীজতলা তৈরি করার জন্য কৃষকদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এখনই যাঁরা বীজতলা করতে চান, তাঁদের উঁচু কোনো জায়গায় তা করতে বলা হয়েছে। আউশ ধান এখনো পাকেনি, ফলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে পরিপক্ব হওয়া সবজি তুলে উঁচু নিরাপদ স্থানে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল মুঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের বন্যায় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছি। আমনের বীজতলা নষ্ট হলে কৃষক যাতে পানি নামার পর তা করতে পারে, সে জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ এলাকায় ৪০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে থাকা শাহ আলম নামের এক ব্যক্তির টিনের ঘর ও আসবাবপত্র নৌকায় করে নিরাপদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শংকরদহ, রংপুর, ২৮ জুন। ছবি: মঈনুল ইসলাম
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ এলাকায় ৪০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে থাকা শাহ আলম নামের এক ব্যক্তির টিনের ঘর ও আসবাবপত্র নৌকায় করে নিরাপদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শংকরদহ, রংপুর, ২৮ জুন। ছবি: মঈনুল ইসলাম

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস বলছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি কুড়িগ্রাম দিয়ে ঢুকে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত চলে এসেছে। আগামীকাল সোমবারের মধ্যে ওই পানি মানিকগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করতে পারে। অন্যদিকে, পদ্মার পানি বেড়ে নিচু এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে পদ্মার তীরবর্তী জেলাগুলোয় পানি ঢুকতে পারে। এদিকে তিস্তার পানি তো নিয়মিতভাবেই বাড়ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, উজানে অতিবৃষ্টি হওয়ায় এবারের বন্যার পানি খুব দ্রুত বাড়ছে। দেশের ভেতরেও আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এ কারণে বন্যার পানি আরও নতুন নতুন এলাকায় দ্রুত ঢুকতে পারে।

কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস হিসেবে জমিতে যাতে বৃষ্টির পানি জমতে না পারে, সে জন্য নালা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাছের পুকুরের পাড় উঁচু বেড়া বা জাল দিয়ে ঘিরে দিতে বলা হয়েছে, যাতে বন্যার পানিতে মাছ বেরিয়ে যেতে না পারে। এ ছাড়া আখ শক্ত করে বেঁধে দেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নীতকরণ প্রকল্পের পরিচালক মাঝহারুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ে প্রতিবছরই বন্যা হয়। এ বছর একটু আগে শুরু হয়ে গেল। ফলে, পানি যত দিন থাকবে, তত দিন কৃষকদের নতুন করে আমনের বীজতলা তৈরি না করে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে তাঁরা আবারও বীজতলা তৈরি করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে হবে।