কিশোর সালমান আত্মহননে এসআই হেলালের যোগসম্পর্ক

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় একটি বাসায় পুলিশ যাওয়ার পর এক কিশোরের আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) যোগসম্পর্ক থাকার তথ্য উঠে এসেছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাফিলতিরও প্রমাণ মেলেছে। ঘটনার তিন দিন পর সোমবার বিকেলে নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের কাছে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।


আত্মহননকারী কিশোরের নাম সালমান ইসলাম ওরফে মারুফ। নগরের আগ্রাবাদ এলাকার একটি স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। পাশাপাশি একই এলাকার লাকী প্লাজার তৈজসপত্রের একটি দোকানে খণ্ডকালীন চাকরি করত।


তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সাদাপোশাকে ডিউটিতে যাওয়ার নিয়ম না থাকলেও ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল খান আগ্রাবাদ এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালাতে যান। এই ঘটনার পর ওই বাসার এক কিশোর আত্মহত্যা করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসায় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসআই হেলাল খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, থানার এসআই এ রকম ঘটনা ঘটালেও দায়িত্বরত ওসি সুদীপ কুমার দাশ দায় এড়াতে পারেন না। তদন্তে তাঁরও গাফিলতির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে তাঁকেও শোকজ করা হয়েছে।


দুই সোর্স নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরের আগ্রাবাদ বাদামতলী বড় মসজিদ গলিতে যান এসআই হেলাল খান। সেখানে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কিশোর সালমান ইসলাম ওরফে মারুফের সঙ্গে সোর্সসহ পুলিশ কর্মকর্তার কথা–কাটাকাটি হয়। এরপর হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। সালমানের পরিবারের দাবি, টাকার জন্য এসেছিলেন এসআই হেলাল। এক লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। নইলে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে ভয়ে তাঁরা ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। এর মধ্যে সালমানের মা ও বোনের সঙ্গেও পুলিশ ও সোর্স ধস্তাধস্তি শুরু করে। তাতে সালমানের বোন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পুলিশ বোন ও মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার ধারণা ছিল, পুলিশ তার মা–বোনকে থানায় নিয়ে গেছে। এতে ক্ষোভে সে বাসায় আত্মহত্যা করে।


ঘটনার পর পুলিশ কমিশনার তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদ। প্রতিবেদন দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তিনি।


এদিকে সালমানের আত্মহত্যার ঘটনার পর নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় এসআই হেলালের বিভিন্ন অনিয়মের কথা ভুক্তভোগীরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাচ্ছেন। এত দিন তাঁর ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। রাস্তায় লোকজনকে আটক করে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে হেলালের বিরুদ্ধে। হেলাল ছাড়াও ডবলমুরিং থানার আরও কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য রোববার রাতে একযোগে ওই থানার ১২ জন পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয় পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে।


সালমানের মা রোজিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আর কারও ছেলেকে যাতে এভাবে হারাতে না হয়। দোষী পুলিশের শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়।