এনামুল হত্যা মামলার বাদী অপহরণ মামলা, ২ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

সিরাজগঞ্জে আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক হত্যা মামলার বাদীকে অপহরণের অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগের স্থানীয় দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নিহত এনামুলের বাবা আব্দুল কাদের প্রমানিক বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এর পর থানা এলাকা থেকেই এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন, কামারখন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ রেজা ও সাধারন সম্পাদক মামুন সেখ। তাঁদের দুজনের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে নিহত এনামুলের বাবা ও ভাইকে থানায় মারধর করা সহ থানা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুৃলিশ টিয়ার গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

এনামুল হক হত্যা মামলার বাদী হলেন এনামুলের বড় ভাই রুবেল।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩ আগষ্ট এনামুল হক হত্যা মামলার বাদী এনামুলের বড় ভাই রুবেলকে কামারখন্দ বাজার এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এনামুল হত্যা মামলা তুলে নিতে এবং এনামুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মেমোরি কার্ডের জন্য চাপ দেয় অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে রুবেলের চিৎকারে বেকায়দায় পড়ে গিয়ে অপহরণকারীরা তাঁকে বগুড়ার মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেয়। সেখানে স্থানীয় একটি মসজিদের মুসুল্লিরা রুবেলকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। পরে শাহজাহানপুর থানা–পুলিশ তাঁকে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

এদিকে আজ বিকেলে অপহরণের অভিযোগে থানায় মামলা করতে গেলে কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে ঢুকে নিহত এনামুলের বাবা ও তাঁর বড় ভাইকে প্রতিপক্ষ মারপিট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামীলীগসহ সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী থানায় চলে আসে। এ সময় তারা থানার বাইরে ও ভেতরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ থামাতে টিয়ারসেল ও শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

নিহত এনামুলের বড় ভাই রুবেল প্রমানিক অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, 'আজ বিকেল তিনটার দিকে আমরা মামলা করা জন্য থানায় দিকে যাচ্ছি, সে সময় অভিযুক্ত পারভেজসহ তিনজন আমাদের পিছু নেয়। আমরা ভয় পেয়ে দ্রুত থানায় ঢুকে ওসি সাহেবের কক্ষে আশ্রয় নেই। এই বিষয়টি ওসিকে জানানোর পর ওসি সাহেব থানার ভেতরে থেকেই পাভেলকে গ্রেফতার করেন। তাকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী থানায় চলে আসে। এ সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী থানার বাইরে ও ভেতরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

রুবেল আরও বলেন, 'ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ওসির কক্ষের মধ্যেই ঢুকে আমাকে ও বাবাকে মারপিট করে এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য ওসি সাহেব তার কক্ষের বাইরে ছিলেন। ফিরে এসে কক্ষের ঘটনা দেখতে পেয়ে তাঁদের সেখান থেকে বের করে দেন। এ অবস্থায় পুলিশী নিরাপত্তায় আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। যে কোন সময় মামলার আসামি ও তাঁর সমর্থকেরা আমাদের বাড়িতেও হামলা করতে পারে বলে আমরা আশংকা করছি। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।'

কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিজয় হত্যা মামলার বাদী রুবেলের বাবা আব্দুল কাদের প্রমানিক বাদী হয়ে ৬জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর বিকেলেই থানা এলাকা থেকেই এজাহারভুক্ত আসামী পারভেজ রেজা ও মামুন সেখকে গ্রেপ্তার করে সন্ধ্যায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

তাঁর কক্ষে মারপিটের অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, 'আমার কক্ষের ভেতরের বিষয়ে বাদী পক্ষের অভিযোগ সত্য নয়।'

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর কবির বলেন, 'থানার বাইরে পারভেজের সমর্থক নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করলেও তারা থানার ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক থানায় গিয়েছিলাম।'

ওসির কক্ষের ভেতরে মারপিটের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সেটি ওসি ভাল বলতে পারবেন। আমি কিছু জানি না।'
বিক্ষোভ থামাতে টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেলেও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

গত ২৬ জুন মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে শহরের এম মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে যাওয়ার পথে বাজার স্টেশন এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারি হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হককে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। হামলার ঘটনায় এনামুলের বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন, শিহাব আহমেদসহ সংগঠনের পাঁচ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। এরপর ৫ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এনামুলের মৃত্যু হয়। এনামুল মারা যাওয়ার পর হামলার মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়ে যায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এনামুল মারা যাওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা হওয়ার পরই চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের মধ্যে বর্তমানে তিনজন জেলা কারাগারে এবং আল আমিন নামে একজন জামিনে আছেন। এ ছাড়া প্রধান আসামি শিহাব আহমেদ পলাতক। এ ঘটনায় মামলার আসামি জেলা ছাত্রলীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ৭ জুলাই নিহত ছাত্রনেতা এনামুল হক স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। এসব ঘটনায় পাল্টাপাল্টি আরও চারটি মামলা হয়েছে। এ ধরনের সংঘর্ষের কারণে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিলে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে গত ৮ জুলাই থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় তালাবদ্ধসহ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।