'মোগো কষ্টের শ্যাষ নাই'

সিডরে ভেঙে যাওয়া বাঁধ এক বছর আগে যেনতেনভাবে বালুর বস্তা দিয়ে মেরামত করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই তা আবার ভেঙে যায়। গত আগস্ট মাসে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী নদীতীরের জিনতলা এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
সিডরে ভেঙে যাওয়া বাঁধ এক বছর আগে যেনতেনভাবে বালুর বস্তা দিয়ে মেরামত করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই তা আবার ভেঙে যায়। গত আগস্ট মাসে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী নদীতীরের জিনতলা এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় সিডরের আট বছরেও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের এক লাখের বেশি মানুষ অরক্ষিত অবস্থায় আছে।
পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও মহাসেনে পাথরঘাটা উপজেলায় সব মিলিয়ে ২১ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ও ১১৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাউবোর কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ উপজেলায় বর্তমানে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায় এবং ১১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাথরঘাটা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ড, কাকিঁাচড়া ইউনিয়নের কাকিঁাচড়া বাজার, কালমেঘা ইউনিয়নের কূপদোন, কালমেঘা বাজার, ছোনবুনিয়া, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বাদুড়তলা, চরলাঠিমারা, জিনতলা, পদ্মা, আজিরখাল, রুহিতা, গাববাড়িয়া, তাফালবাড়িয়া, দক্ষিণ চরদুয়ানি, চরদুয়ানি বাজার ও কাঁঠালতলী ইউনিয়নের পরীঘাটাসহ অন্তত ১৮ গ্রামের কয়েক কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে এসব এলাকা অরক্ষিত হয়ে গেছে।
শুক্রবার বিকেলে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মার ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর যে এলাকা দিয়ে পাথরঘাটায় আঘাত হানে, সে এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধ এখনো ভাঙা অবস্থায় আছে।
গত আট বছরে ঘূর্ণিঝড় আইলা, মহাসেন ও আইরিন, কোমেন এবং অমাবস্যা-পূর্ণিমার অধিক উচ্চতার জোয়ারে নতুন করে ওই এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয় এবং প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন একটি খালের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৪০০ শতক ধানি জমি নষ্ট হয়েছে। এই খালের একপাশে বসে পুরোনো জাল বুনছিলেন জেলে আলমগীর হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘এইহানে গতবারও ধান বুনছিলাম। বাঁধ মেরামত না অওনে পানির তোড়ে এখন এইহানে খাল অনয়্যা গ্যাছে।’ খালের ওপর সাঁকো দিয়ে যাচ্ছিলেন আবু বকর নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, এই খালের ওপারে সৈকত গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নড়বড়ে এই সাঁকো পার হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলে যায়।
পদ্মা গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘বাঁধ মেরামত না হওয়ায় পানির তোড়ে ফসলি জমিতে খালের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চারটি গ্রামের অন্তত দুই হাজার একর জমিতে কোনো ফসল হয় না। একই অবস্থা বাদুড়তলা, চরলািঠমারা, জিনতলা, পরীঘাটা গ্রামের। রুহিতা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আলীম বলেন, ‘মোগো কষ্টের শ্যাষ নাই। জমিজিরাত সব শ্যাষ, গাঙ্গে মাছ-পোনা নাই। মোরা যে ক্যামনে বাইচ্চা আছি কইতে পারি না।’
পাউবোর কর্মকর্তারা বলেন, সিডর, আইলা, মহাসেনে জেলায় ৮১২ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ এবং ৬০৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে ৫৩৩ কিলোমিটার বাঁধ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় মেরামত করা হয়েছে এবং ১৪১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বাঁধের মেরামত চলছে। এ ছাড়া বেতাগী ও আমতলী সদরে ৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত চার বছরে জেলার অধিকাংশ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে পাথরঘাটার কিছু এলাকার বাঁধ মেরামত করা যায়নি। বর্তমানে সিআইপি নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পাথরঘাটার এসব বাঁধ মেরামতের জন্য নকশা করা হচ্ছে।