অপ্সরীর খোঁজে

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে ডানা মেলা অপ্সরী প্রজাপতি l ছবি: লেখক
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে ডানা মেলা অপ্সরী প্রজাপতি l ছবি: লেখক

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গেছি। সকালে গেটের পাশ দিয়েই নিচের ছড়াটায় নেমে গেলাম। উল্টোদিকে হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজের নিচটা পার হয়ে খানিকটা সামনের দিকে এগোলাম। ব্রিজের নিচটা পার হতেই বেশ কয়েকটি মাঝারি থেকে বড় আকারের প্রজাপতিকে মাটি থেকে রস শুষে নিতে দেখলাম। ওদের একটু সামনেই ছোট্ট আকারের একটি প্রজাপতিকে দেখলাম জীবনের প্রথম। খুশিতে মন নেচে উঠল। ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবরের ঘটনা এটি। দ্বিতীয়বার দেখা হলো কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের ছড়ায়। লাউয়াছড়ায় ওকে ডানা মেলা অবস্থায় পাইনি। শুধু ওর ডানার নিচের সৌন্দর্যই দেখেছি। কিন্তু কাপ্তাইয়ে ডানা মেলা অবস্থায় ওর ডানার ওপরের দিকের সৌন্দর্য দেখলাম। সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মতো ওর রূপ।
এটি এ দেশের এক দুর্লভ প্রজাতির প্রজাপতি অপ্সরী (Orchid Tit)। Lycanidae পরিবারভুক্ত প্রজাপতিটির বৈজ্ঞানিক নাম Chliaria othona।
অপ্সরী ছোট আকারের প্রজাপতি। প্রসারিত অবস্থায় ডানা ২৪ থেকে ২৭ মিলিমিটার। দেহের নিচ ও পাশটা সাদা এবং ওপরটা ফ্যাকাশে নীল। পেছনের ডানায় দুটি করে লেজ। নিচেরটি ২ মিলিমিটার এবং ওপরেরটি ৪ মিলিমিটার লম্বা। ডানা বন্ধ অবস্থায় স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। বন্ধ ডানা বা ডানার নিচের রং সাদা এবং ডানার প্রান্তের শেষ কোষে কিছু হালকা দাগ রয়েছে। এ ছাড়াও ডানায় কালো বর্ডারযুক্ত কিছু দাগ-ছোপ রয়েছে। দুই ডানায় দুটি কালো ফোঁটাও দেখা যায়। এরা যখন ডানা মেলে রোদ পোহায়, তখন ডানার ওপরের অংশের রং দেখে সহজেই স্ত্রী-পুরুষ আলাদা করা যায়। পুরুষের পেছনের ডানার ওপরটা ফ্যাকাশে নীল। সামনের ডানার ওপরের পশ্চাদংশ ফ্যাকাশে নীল, মাঝখানটা গাঢ় নীল এবং প্রান্ত গাঢ় কালো। স্ত্রীর ডানার ওপরটা বাদামি, তবে নিচের অংশ সাদাটে।
অপ্সরী সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের আর্দ্র ও মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। বনের স্যাঁতসেঁতে এলাকায় মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়। পাহাড়ের ২০০ থেকে ৮০০ মিটার উচ্চতায়ও বাস করতে পারে। ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এরা স্বচ্ছন্দে ওড়াউড়ি করে বেড়ায়। জুনে এদের বেশি সংখ্যায় দেখা যায়। এরা ভালো উড়তে পারে না এবং কিছুক্ষণ পর পর গাছের পাতা ও ফুলের ওপর বসে। স্যাঁতসেঁতে মাটি বা প্রাণীর ভেজা মল থেকে তরল খাদ্য শুষে নেয়।
প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী অপ্সরী পোষক অর্কিডের কুঁড়ি ও ফুলের ওপর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে মুখে লাল ব্যান্ডযুক্ত সবুজ শূককীটের জন্ম হয়। এরা অর্কিডের ফুল খেয়ে কয়েকবার খোলস বদলিয়ে মসৃণ সবুজাভ-ধূসর মূককীটে পরিণত হয়। মূককীট অর্কিডের কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে। নির্দিষ্ট সময় পরে মূককীটের খোলস কেটে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি বের হয়ে নীল আকাশে ডানা মেলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের ওয়েস্টার্ন ঘাট, দেরাদুন, আসাম এবং মিয়ানমারে দেখা যায়।