প্রবাসীরা পঙ্গুত্বের ঝুঁকি নিয়ে ফিরেও বিমাসুবিধা পাচ্ছেন না

প্রবাসী শ্রমিকফাইল ছবি: প্রথম আলো

বিদেশে যাওয়ার আগে প্রবাসী বিমা বাধ্যতামূলক। কর্মস্থলে মারা গেলে কিংবা পঙ্গুত্বের শিকার হলে প্রবাসীরা এই সুবিধা পান। এ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে এলে বিমা দাবি করে ক্ষতিপূরণ পান প্রবাসীরা। তবে স্বাস্থ্য বিমাসুবিধা পান না তাঁরা। তাই পঙ্গুত্বের ঝুঁকি ছাড়াও নানা রোগ নিয়ে ফিরেও বিমাসুবিধা পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। আত্মহত্যা বা এইডসে মৃত্যু হলেও নেই বিমাসুবিধা।

‘প্রবাসীদের বিমা; সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা’ শিরোনামে আয়োজিত এক জাতীয় পরামর্শ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ভবনে সভার আয়োজন করে তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)। গত পাঁচ বছরে প্রবাসী বিমার বিপরীতে নেওয়া বিমা দাবি বিশ্লেষণ করে এবং মাঠপর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি নিবন্ধ তুলে ধরা হয় সভায়।

নিবন্ধের তথ্য বলছে, দেশের ১০ জেলার ৩৬টি উপজেলায় কাজ করে ওকাপ। এ সীমিত পরিসরের মধ্যেই ২০২০ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ৪৪৫ জন বিদেশফেরত প্রবাসী কর্মীকে চিকিৎসাসুবিধা দিয়েছে তারা। এর মধ্যে ৩৯ শতাংশ পঙ্গুত্বের নানা রকম ঝুঁকি নিয়ে ফিরেছেন। আর ২৯ শতাংশ ফিরেছেন ক্যানসার, লিভারে সমস্যা ও হৃদ্‌রোগের মতো ব্যাধি নিয়ে। ৯ শতাংশের স্নায়বিক সমস্যা আর ১৫ শতাংশের আলসার, টিউমারসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা গেছে।

৮ শতাংশ নারী কর্মী ফিরেছেন প্রজনন সক্ষমতা হারানোর সমস্যা নিয়ে। তাঁরা বিদেশেও নিজের টাকায় চিকিৎসা করিয়েছেন। পরে রোগ নিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন এবং আরও অসহায়ত্বের মধ্যে পড়েছেন। এসব কর্মীর জন্য বিমা দাবির কোনো সুযোগ নেই। তবে কর্মীদের আবেদনের ভিত্তিতে নিজস্ব তহবিল থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা দেয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

প্রবাসীদের বিমার টাকা জমা নেওয়া ও তাঁদের কল্যাণে নিয়মিত কাজ করে সরকারি সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। তাদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে প্রবাসীদের বিমাসুবিধা নিশ্চিত করছে আরেক সরকারি সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশন। শুরুতে মৃত্যুজনিত বিমাসুবিধা ২ লাখ টাকা হলেও এ বছর তা বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ভবনে সভার আয়োজন করে তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

ওকাপ বলছে, বিদেশে অনেকেই নানা কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। তাই আত্মহত্যাকে বিমাসুবিধার আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া এইডস আক্রান্ত মৃত্যুকেও বিমাসুবিধায় না রাখার বিষয়টি জাতীয় নীতির লঙ্ঘন। এ দুটি বিষয় সংশোধন করা হবে বলে পরামর্শ সভায় সম্মতি দিয়েছেন কল্যাণ বোর্ড ও জীবন বিমার কর্মকর্তারা। আর কর্মীদের স্বাস্থ্য বিমার বিষয়েও দাবি তুলেছে ওকাপ। যাতে বিদেশে থাকা অবস্থায় এবং দেশে ফিরেও কর্মীরা এ সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন।

নিবন্ধে বলা হয়, ২০১৯ থেকে গত পাঁচ বছরে বিমা করে বিদেশে গেছেন ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫৩ জন। আর বিভিন্ন কারণে ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিমা দাবি করেছেন ১ হাজার ১৬৫ জন। এর মধ্যে প্রবাসে মৃত্যুর কারণে বিমাসুবিধা নিয়েছে ৯৭৩ প্রবাসীর পরিবার। মোট বিমা দাবির ৯০ শতাংশ মৃত্যুজনিত। আর পঙ্গুত্ব নিয়ে ফিরে বিমা দাবি করেছেন মাত্র ৭ জন, যা ১ শতাংশের কম।

ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা প্রবাসীদের একটি চিত্রও পাওয়া গেছে। প্রতি মাসে লাখো কর্মী বিদেশে গেলেও অনেকে ফিরে আসছেন নির্ধারিত সময়ের আগে। তাঁদের জন্য বিমার আওতায় কিছু ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুবিধা রাখা আছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ভবনে সভার আয়োজন করে তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)।
ছবি: সংগৃহীত

ওকাপ বলছে, গত পাঁচ বছরে বিমাসুবিধা নেওয়া প্রবাসীদের মধ্যে ১০ শতাংশ কর্মী বিদেশে যাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। যদিও এ সুবিধার কথা জানা না থাকায় বিমা দাবির আবেদন করেন না অনেক প্রবাসী। বিদেশে যাওয়ার আগে, প্রাক্‌-বহির্গমন প্রশিক্ষণের সময়েও বিমাসুবিধার কথা জানানো হয় না তাঁদের।

কল্যাণ বোর্ড ও জীবন বিমার পক্ষ থেকে সভায় বলা হয়, যাঁরা বিদেশে মারা যান, তাঁদের মরদেহ আসার সঙ্গে সঙ্গে সব তথ্য চলে আসে। মৃত কর্মীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করার প্রয়োজন হয় না। তাঁরা সবাই বিমা দাবি পেয়ে যান। তবে যাঁরা পঙ্গুত্ব নিয়ে ফেরেন বা ৬ মাসের মধ্যে ফিরে আসেন, তাঁদের কোনো তথ্য নেই সরকারি সংস্থার কাছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান সভায় বলেন, অনেকেই হয়তো জানেন না বিমাসুবিধার কথা। তাই তাঁরা বিমা দাবি নিয়ে আসেন না। এটি ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে জীবন বিমার পক্ষ থেকে। আর স্বাস্থ্য বিমার বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর ধরে কাজ চলছে, এটি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে। এ ছাড়া বিদেশফেরত কর্মীর সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে প্রতি মাসে ভাতা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে কল্যাণ বোর্ড।

সভায় নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ওকাপের চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য দেন কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক শোয়াইব আহমদ খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (জাতীয় এইডস ও এসটিডি নিয়ন্ত্রণ) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মঈনুল হাসান প্রমুখ।

আরও পড়ুন