কিডনি রোগের চিকিৎসার পরিসর বাড়ানোই চ্যালেঞ্জ

  • আট বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হচ্ছে। সেখানে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদ্‌রোগের জন্য আলাদা ইউনিট থাকবে।

  • ২২ জেলায় সরকার যে হাসপাতাল নির্মাণ করছে, সেখানে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস সুবিধা থাকবে।

কিডনিফাইল ছবি

বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। আবার চিকিৎসাও সবার হাতের নাগালে নয়। ডায়ালাইসিসের জন্য রোগীদের বড় অংশকে শহরমুখী হতে হয়। কিডনি রোগের চিকিৎসার পরিসর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিগত ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে।

সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ অবশ্য বলছে, কিডনি রোগের চিকিৎসার পরিসর বাড়ানো, গবেষণাসহ এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তারা বলছে, বিশ্বে এখন অষ্টম মৃত্যুর কারণ কিডনি রোগ। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২০৪০ সালে এটি মৃত্যুর পঞ্চম কারণ হয়ে উঠবে।

এ পটভূমিতে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব কিডনি দিবস’। প্রতিবছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালন করা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য।’

কিডনি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ওয়ার্ল্ড ‘কিডনি ডে নামে’ বেলজিয়ামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তারা বলছে, বিশ্বে এখন অষ্টম মৃত্যুর কারণ কিডনি রোগ। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২০৪০ সালে এটি মৃত্যুর পঞ্চম কারণ হয়ে উঠবে।

প্রান্তিক পর্যায়ে ডায়ালাইসিস সুবিধা বাড়ানো দরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব।
অধ্যাপক এম এ সামাদ, সভাপতি, ক্যাম্পস

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছে, এমন মানুষের অনুমিত সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল। জটিল রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন করে বা ডায়ালাইসি করে বেঁচে থাকতে হয়, দুটিই বেশ ব্যয়বহুল। কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া বেশ জটিল। ডায়ালাইসিস সুবিধার বেশির ভাগই বড় শহরকেন্দ্রিক। ডায়ালাইসিস করাতে সরকারি হাসপাতালে খরচ কম পড়ে, তবে বেসরকারি হাসপাতালে এর খরচ কয়েক গুণ বেশি।

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের আটটি বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হচ্ছে। সেখানে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদ্‌রোগের জন্য আলাদা ইউনিট থাকবে। ডায়ালাইসিসসহ কিডনি চিকিৎসার সব সুবিধাই থাকবে। এ ছাড়া সরকার ২২টি জেলায় যে হাসপাতাল নির্মাণ করছে, সেখানে ১০ বেডের ডায়ালাইসিস সুবিধা থাকবে। সরকারের এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া বেশ জটিল। ডায়ালাইসিস সুবিধার বেশির ভাগই বড় শহরকেন্দ্রিক। ডায়ালাইসিস করাতে সরকারি হাসপাতালে খরচ কম পড়ে, তবে বেসরকারি হাসপাতালে এর খরচ কয়েক গুণ বেশি।

কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গবেষণা করছে। হঠাৎ কেন কিডনি বিকল হয়ে যায়, সে বিষয়ে একটি গবেষণার ফলাফল আগামী বছর জানা যাবে। এ ছাড়া আগামী পাঁচ বছরের জন্য একজন উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক রোবেদ আমিন। তিনি জানান, একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে কিডনি–সম্পর্কিত নানা ধরনের তথ্য থাকবে। গণমাধ্যমে সচেতনতার কার্যক্রম পরিচালনার চিন্তা রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গেও বৈঠক হচ্ছে।

আরও পড়ুন

অনিরাপদ খাদ্য ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তন কিডনির রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ উল্লেখ করে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, দেশে লবণ খাওয়া হয় বেশি, যা সরাসরি কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে। কিডনির রোগপ্রতিরোধ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

কিডনি ভালো রাখতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম, ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করাতে হবে।

দেশে লবণ খাওয়া হয় বেশি, যা সরাসরি কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে।
অধ্যাপক রোবেদ আমিন

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি সংগঠন কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে ডায়ালাইসিস সুবিধা বাড়ানো দরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব। এ জন্য ইউরিন (মূত্র) ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করাতে হবে।

বাংলাদেশে কিডনিদাতার সংকট অনেক উল্লেখ করে ডা. এম এ সামাদ বলেন, আইনে কিডনিদাতার পরিধি বাড়ালে অনেকটা সমাধান হতে পারে। এ ছাড়া যাঁরা কিডনি দিতে ইচ্ছুক, সরকারিভাবে তাঁদের একটি ডাটাবেজ করে প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কিডনি সুরক্ষা বিমা চালুর কথাও বলেন তিনি।

প্রান্তিক পর্যায়ে ডায়ালাইসিস সুবিধা বাড়ানো দরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব। এ জন্য ইউরিন (মূত্র) ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করাতে হবে।
ক্যাম্পস সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ