অবশেষে মায়ের চেয়ে ‘বড়’ পাকুর এনআইডি সংশোধন, এবার চাকরি ফেরত পাওয়ার আশা
জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের চেয়ে ১৩ বছরের বড় দেখানো ছেলের বয়স অবশেষে সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ সোমবার দুপুরে সংশোধিত পরিচয়পত্রের কপি ভুক্তভোগী পাকু দাশের হাতে তুলে দেন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী পাকু দাশের জন্মতারিখ ১৯৮৫ সালের ২০ এপ্রিল। অর্থাৎ এখন তাঁর বয়স ৩৭ বছর ৮ মাস। তাঁর আরও অন্তত ১২ বছর চাকরি করার বয়স রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী পাকু দাশের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) বয়স তাঁর মায়ের চেয়ে ১৩ বছর বেশি উল্লেখ করা হয়েছিল। এনআইডিতে জন্মতারিখ লেখা হয়েছিল ১৯৫৫ সালের ২০ এপ্রিল। অথচ তাঁর মা রাধা রানী দাশের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৩ আগস্ট। অর্থাৎ মায়ের চেয়ে ১৩ বছর ৩ মাস আগে ছেলের জন্ম।
এনআইডি অনুযায়ী, ৫৯ বছরের বেশি হওয়ায় অস্থায়ী কর্মীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত ৩০ অক্টোবর ১২৮ জন অস্থায়ী কর্মী চাকরি হারান। তাঁদের একজন পাকু দাশ।
চাকরি হারানোর পর এনআইডিতে বয়স ভুল থাকার বিষয়টি জানতে পারেন পাকু। পরে তা সংশোধনের জন্য দুই মাস ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন। আবার চাকরি হারানোর কারণে কোনো আয়রোজগার না থাকায় মা, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কঠিন সময় পার করছিলেন তিনি। এরপর গত ২৬ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অনলাইনে ‘এনআইডিতে মায়ের চেয়ে ১৩ বছরের বড় ছেলে, গেল চাকরিও’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাকু দাশের মা ও বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করে তাঁর (পাকু) পরিচয়পত্র সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি আজ দুপুরে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের কপি পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান পাকু দাশ। তিনি বলেন, চাকরি হারানোর পর চেষ্টা করে আসছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের। কিন্তু কাজ হচ্ছিল না। সংবাদ প্রকাশের পর অল্প সময়ের মধ্যে পরিচয়পত্র সংশোধন করে দেন নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এতে তাঁর মা ও স্ত্রী খুব খুশী।
এখন চাকরি ফিরে পাওয়া সহজ হবে জানিয়ে পাকু দাশ বলেন, চাকরিটা তাঁর খুব দরকার। তাঁর আয় দিয়ে পুরো সংসার চলে। চাকরি ফেরত পেতে আবেদন করবেন।
চাকরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন পাকু দাশ। মা, স্ত্রী ও এক সন্তানের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। সিটি করপোরেশনের চাকরির সুবাদে থাকেন নগরের মাদারবাড়ির সেবক কলোনিতে। চাকরি চলে যাওয়ায় কলোনিতে থাকা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। তাই চাকরি ফেরত পেতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিচ্ছেন পাকু দাস ও তাঁর মা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত মা-ছেলে বলছেন, চাকরি না থাকলে তাঁদের না খেয়ে থাকতে হবে।
পাকু দাশের চাকরি বহাল রাখার বিষয় জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের সদস্যসচিব খালেদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, পাকু দাশকে এখন জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধিত কপি জমা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন যেহেতু তাদের ভুল সংশোধন করেছে, সিটি করপোরেশনও চাকরিতে বহাল রাখার বিষয়টি ঠিক করে দেবে। আবেদন করলেই তা হয়ে যাবে।