থানচি থমথমে, এলাকা ছাড়ছে অনেক নারী-শিশু

থানচি ছেড়ে চাঁদের গাড়িতে বান্দরবান সদরে যাচ্ছে অনেকে। তাদের মধ্যে নারী-শিশুর সংখ্যা বেশিছবি: প্রথম আলো

দুটি ব্যাংকে হামলা, অস্ত্র লুট, অপহরণ ও গোলাগুলির ঘটনার পর বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরে আজ শুক্রবার পরিস্থিতি থমথমে। বন্ধ রয়েছে থানচি বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন অনেক নারী ও শিশু।

থানচি এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও পুলিশের সতর্ক পাহারা দেখা গেছে। পুলিশ বলছে, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।

আরও পড়ুন

আজ দুপুরে থানচি উপজেলা সদরের ব্রিজের মাথায় গিয়ে দেখা যায়, চাঁদের গাড়ি করে এলাকা ছাড়ছেন অনেকে। সেখানে কথা হয় স্থানীয় টিঅ্যান্ডটি পাড়ার বাসিন্দা জুলি আক্তারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দিন দিন গোলাগুলির ঘটনা বাড়ছে। ছোট দুই ছেলে–মেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে। তাই তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে বান্দরবান সদরে চলে যাচ্ছেন। জুলি আক্তারের সঙ্গে থাকা রিনা আক্তার বলেন, তিনিও সন্তানদের নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

থানচি এলাকায় পুলিশের পাহারা
ছবি: সৌরভ দাশ

সদরের ব্রিজের মাথা এলাকা থেকে বান্দরবান সদরগামী চাঁদের গাড়ি ছাড়ে। সেখানে প্রায় আট ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, পাঁচটি চাঁদের গাড়ি করে যাওয়া যাত্রীদের বেশির ভাগ এলাকা থেকে চলে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বেশি নারী ও শিশুরা।

থানচি উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান অং প্র মোরং প্রথম আলোকে বলেন, নারী ও শিশুরা আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন পরিচিতজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।

বাজারে দোকান কম খুলেছে

উপজেলার একমাত্র বড়বাজার থানচি বাজার। আজ দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকান বন্ধ।

আরও পড়ুন

কাপড়ের দোকানদার নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যখন গুলির শব্দ পান, তখন ভয়ে দোকান ছেড়ে চলে যান। ১০ মিনিট পর আবার এসে দোকান বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকেন। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর বাসায় যান। ভয়ে সকাল থেকে আর দোকান খোলেননি তিনি। দুপুরে বিজিবি নামার পর দোকান খুলেছেন।

থানচি বাজারে বিজিবির পাহারা
ছবি: সৌরভ দাশ

সরেজমিন দেখা গেছে, এই বাজারে ২৪০টি দোকান রয়েছে। আজ দুপুরে ১৫ থেকে ২০টি দোকান খোলা দেখা গেছে। বাকিগুলো বন্ধ।

থানচি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন আজ বাজারে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

পরপর দুটি গোলাগুলির ঘটনায় থানচি বাজারের ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা কমে গেছে। বাজারের তরমুজ বিক্রেতা মোহাম্মদ সাকিব প্রথম আলোকে বলেন, গোলাগুলির ঘটনার আগে তিনি ৪০ থেকে ৫০টি তরমুজ বিক্রি করতেন। কিন্তু আজ মাত্র দুটি বিক্রি করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন বাজারে লোকজন নেই।
শুঁটকি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুসা জানালেন একই কথা। তিনি বলেন আগে দৈনিক ১০ হাজার টাকার শুঁটকি  বিক্রি করতেন। এখন দুই হাজার টাকারও বিক্রি করতে পারছেন না।

থানচি বাজারে দোকানপাট কম খোলা ছিল
ছবি: সৌরভ দাশ

থানায় নিরাপত্তা জোরদার

আজ দুপুরে থানচি থানার চারপাশে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ সদস্যদের থাকতে দেখা গেছে। থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি থানায় একজন করে সহকারী পুলিশ সুপারকে (এসপি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

থানচি থানায় কথা হয় সহকারী পুলিশ সুপার এসপি জুনায়েদ জাহিদীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিন থানায় তদারকের জন্য একজন করে এএসপি এসেছেন।

চাঁদের গাড়িতে এলাকা ছাড়ছে অনেকে
ছবি: সৌরভ দাশ

থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জসিম উদ্দিন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গোলাগুলির পর থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত আরও ১০০ পুলিশ সদস্য থানায় আসছেন। লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

বান্দরবানের দুই উপজেলায় গত মঙ্গলবার রাতে ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। পরে গভীর রাতে আলীকদম উপজেলায় পুলিশ ও সেনাদের একটি যৌথ তল্লাশিচৌকিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তবে গতকাল কারা গুলি চালিয়েছে, এ বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। যদিও এর আগে মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ এবং পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে বলা হয়েছিল।

এদিকে রুমা থেকে অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাড়া পেয়েছেন।