‘লাশের মৃত্যুসনদে যা লেখা থাকছে, তা–ই আমরা মানতে বাধ্য হচ্ছি’

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নারী শ্রমিকের লাশ দেশে আসছে। সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে লাশের সঙ্গে মৃত্যুর সনদ দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সনদে মৃত্যুর কারণ ‘স্বাভাবিক’ লেখা হচ্ছে। বিশেষ করে গত তিন বছরে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’লেখা সনদের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হওয়া এসব নারী শ্রমিকের বেশির ভাগের বয়স ৪০ বছরের কম। পরিবারের সদস্যসহ অভিবাসন-বিশেষজ্ঞরা এই ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ কতটা স্বাভাবিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক অবৈতনিক সদস্য নমিতা হালদার–এর অভিমত

নমিতা হালদার
ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে কাজ করতে গিয়ে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক, যে কারণেই শ্রমিকের মৃত্যু হোক, তার দায় সরকারকে নিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমি যখন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে ছিলাম, তখন অন্যান্য দেশের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কোনো দেশে শ্রমিকের মৃত্যু বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে ওই দেশের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা চাওয়া যায়। নেপালের মানবাধিকার কমিশন খুবই শক্তিশালী। তবে এ বিষয়ে আমাদের মানবাধিকার কমিশন খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি।

আরও পড়ুন

লাশের মৃত্যুসনদে যা লেখা থাকছে, তা–ই আমরা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি, কোনো চ্যালেঞ্জ করতে পারছি না। এ ক্ষেত্রেও দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেই উল্লেখ করতে হবে যে মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ দেখা দিলে সরকার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে। লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন থাকলে দেশে ফেরার পরও লাশের ময়নাতদন্ত করা যাবে—এমন কথা চুক্তিতেই লেখা থাকলে তা শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। শুধু সন্দেহ করলেই তো হবে না, প্রমাণ লাগবে। এ প্রমাণের জন্যই ময়নাতদন্ত করতে হবে। কম বয়সে নারী বা পুরুষ শ্রমিক বিদেশে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে মারা যাচ্ছেন, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। হৃদ্‌রোগ বা অন্য কোনো কারণে মারা গেলেও মারা যাওয়ার আগে ওই শ্রমিক কোনো পরিবেশ কাজ করছেন, তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়েছিল কি না—এ সবকিছুই জানতে হবে। দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হতে হবে। শুধু সংখ্যা নয়, শ্রমিকের সুরক্ষার বিষয়টিতে সরকারকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।