চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সভায় অনুপস্থিত সিডিএর প্রকৌশলী, ক্ষোভ

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় চট্টগ্রাম সিটির বারইপাড়া এলাকায়
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কিন্তু এবারের জলাবদ্ধতার সময় সংস্থা দুটির কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে তেমন সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। এজন্য নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে।

এবার প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনায় ডাকা জরুরি সভায়ও উপস্থিত ছিলেন না সিডিএ–এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দীন ও কাজী কাদের নেওয়াজ।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উদ্যোগে জরুরি সভা হয়। এটি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনায় নবম সভা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা তিনটি সংস্থার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় সিডিএ–এর দুই প্রকৌশলীর অনুপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি লিখিতভাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সভায় সবাই যাতে উপস্থিত থাকতে পারেন সেজন্য সময়ও পরিবর্তন করা হয়েছিল। এরপরও সিডিএ–এর প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রকল্প পরিচালক উপস্থিত থাকেননি। অনুপস্থিতির বিষয়টি কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হবে এবং মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার নিরসনে সিডিএ দুটি, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে মোট চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। ছয় বছরে ব্যয় করেছে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সিডিএর ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’। এই প্রকল্পের দুজন প্রকল্প পরিচালক। তাঁদের একজন সিডিএ–এর। অন্যজন সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী। সভায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সভায় অংশ নেওয়া দুই কর্মকর্তা জানান, সভায় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি এবং কাজ নিয়ে আলোচনা চলার একপর্যায়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম সিডিএ–এর প্রকল্প পরিচালক উপস্থিত আছেন কি না, তা জানতে চান। তখন প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দীনের অনুপস্থিতির বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়।

এ সময় তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। এটা নিয়ে দেশে আলোচনা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদেরা অবগত আছেন। সবার সঙ্গে আলাপ করে সভা পিছিয়ে আজকে নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও তাঁরা (দুই প্রকৌশলী) নেই কেন?  তাঁরা প্রকল্পের ফোকাল পারসন। তাঁরা থাকতে না পারলে মিটিং (সভা) করে লাভ কী?’

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে উল্লেখ করে বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, ‘এগুলো তো জনগণের টাকা। জনগণের টাকায় কাজ হচ্ছে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু এমন সভায় পিডি-ডিপিপি (প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রকল্প পরিচালক) উপস্থিত নেই।’

আরও পড়ুন

এ সময় সভায় উপস্থিত একজন জানান, তাঁরা ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে গেছেন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘এটা কি কম গুরুত্বপূর্ণ সভা। আমরা সবাই এখানে এসেছি। এটা সম্পূর্ণ খাম-খেয়ালি বিষয়। সরকারের নির্দেশনা রয়েছে প্রকল্প পরিচালককে ২৪ ঘণ্টা প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে। এটা তাঁর দায়-দায়িত্ব। প্রকল্প পরিচালক দায়-দায়িত্ব ও সরকারি আদেশের বরখেলাপ করছেন। তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

এরপর দুই প্রকৌশলীর অনুপস্থিতির বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সিডিএ–এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (আরডিপিপি) অনুমোদনের বিষয়ে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন তিনি। তিনি এর বেশি বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।

অন্যদিকে কাজী কাদের নেওয়াজের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

খালের দায়িত্ব নিতে নারাজ চসিক

সিডিএ–এর বড় প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৬টির কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে বলে সভায় জানান সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী। এসব খাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

তবে প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত খালগুলো বুঝে নিতে আইনগত জটিলতা রয়েছে বলে জানান সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তবে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এই ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে খালগুলো বুঝে নেওয়ার ব্যাপারে আইনগত কিছু জটিলতা আছে। এখন আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন তাঁরা।

আরও পড়ুন