রাশিয়ার জীবাস্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে: জার্মানির জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বৈশ্বিক জলবায়ু পদক্ষেপবিষয়ক বিশেষ দূত জেনিফার মরগ্যান বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার ভয়াবহ আগ্রাসনের ফলে সেখানে এক নাটকীয় ও নৃশংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ুর নিরাপত্তা, জ্বালানির নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে জার্মানিসহ অন্যান্য দেশের রাশিয়ার জীবাস্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো জরুরি। রাশিয়ার ওপর থেকে জ্বালানিনির্ভরতা যত দ্রুত কমানো যায়, সে পদক্ষেপ জার্মানি নিতে শুরু করেছে।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জেনিফার মরগ্যান এ মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জেনিফার মরগ্যান গত মাসে বৈশ্বিক জলবায়ু পদক্ষেপবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পান। নতুন এই পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি প্রথম বিদেশ সফরে বেছে নেন বাংলাদেশকে। গত বুধবার বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি ঢাকার বাইরে সাতক্ষীরায় গেছেন। রাত্রি যাপন করেছেন সুন্দরবনে। চার দিনের এই সফরে তিনি সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কতটা পরিলক্ষিত হবে, তা জানতে চাইলে জেনিফার মরগ্যান বলেন, ‘ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া ও পুতিনের ভয়াবহ আগ্রাসনের ফলে প্রভাব পড়েছে। প্রথমত আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। প্রতি মুহূর্তে সেখানে নাটকীয় ও নৃশংস প্রভাব আমরা লক্ষ করছি। জলবায়ুর নিরাপত্তা, জ্বালানির নিরাপত্তা ও শান্তি সব বিষয়কে এক করে যদি পরিস্থিতির ওপর নজর দিলে এটা স্পষ্ট যে জার্মানিসহ অন্য দেশগুলোর রাশিয়ার জীবাস্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। এটা যত দ্রুত কমানো যায় সেটাই আমরা করছি।’
জেনিফার মরগ্যানের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জীবাস্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও অনিবার্য করে তুলেছে। জার্মানির বৈশ্বিক জলবায়ু পদক্ষেপবিষয়ক বিশেষ দূত বলেন, ‘রাশিয়ার পাশাপাশি অন্য উৎসের জীবাস্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। ক্রমবর্ধমান হারে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণের পাশাপাশি নিজেদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে হবে। চূড়ান্তভাবে বলা যায়, জ্বালানিতে উত্তরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আমরা যেখানে নিয়ে যেতে চাই, এই যুদ্ধ আমাদের পথ দেখাচ্ছে। একটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের।’
জেনিফার মরগ্যান বলেন, ‘ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠাই যে আমাদের মূল লক্ষ্য তাতে কোনো সংশয় নেই। তাই বলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি জার্মানির অগ্রাধিকার থেকে সরে গেছে এমনটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। জার্মানির পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বে অনেক চ্যালেঞ্জ ও সংকট আছে। কিন্তু সব পদক্ষেপ নিতে হবে সমান্তরালভাবে। জ্বালানি ব্যবহারের রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় গতি আনতে হবে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ বিষয়ে জার্মানি বিশেষভাবে জোর দিতে চায়।
কস্ট অব ট্রান্সিশন আইপিসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণের জন্য যাতে বাড়তি টাকা গুনতে না হয় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।জেনিফার মরগ্যান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে ও জানতে এখানে এসেছি।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা দেড় ডিগ্রিতে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ও জার্মানি এক সঙ্গে কাজ করতে পারে।’ তিনি জানান, এ বছরের শেষে জার্মানি জলবায়ু ও উন্নয়ন অংশীদারত্ব পরিকল্পনা ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এতে জীবাস্ম জ্বালানি থেকে সৌর বিদ্যুতে উত্তরণে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জ্বালানি সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী জার্মানি।
জার্মানির বৈশ্বিক জলবায়ু পদক্ষেপবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে জেনিফার মরগ্যান এখানকার নাগরিক সমাজের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে নাগরিক সমাজ এবং বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলো দারুণ কাজ করছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য গতিশীল নাগরিক সমাজের ভূমিকা অপরিসীম।