সেই বিটিআই আমদানিকারকের ওয়েবসাইটে যা দেখা গেল
মশার লার্ভা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) বিটিআই এনে দেওয়া প্রতিষ্ঠান মার্শালের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলে বেশ কিছু মজার তথ্য দেখা যাবে। দেশি প্রতিষ্ঠান বলা হলেও ওয়েবসাইটে তার ছিটেফোঁটা নেই বললে চলে। সেখানে ইংরেজি ও আরেকটি বিদেশি ভাষায় নানা তথ্য দেওয়া। কর্তাব্যক্তি হিসেবে যাঁদের কথা বলা হয়েছে, তাঁরা সব বিদেশি। ঝকঝকে অন্য ছবিগুলোও ভিনদেশিদের।
ডিএনসিসির আমদানি করা বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) নিয়ে যখন জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দাবি করে, তাদের সরবরাহ করা পাঁচ হাজার কেজি বিটিআই সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদিত। তবে সেটা সত্য নয় বলে জানায় বেস্ট কেমিক্যাল লিমিটেড। এ নিয়ে সিঙ্গাপুরের ওই কোম্পানি নিজেদের ফেসবুক পেজে সতর্কবার্তাও দেয়। তাতে এটাও বলা হয়, মার্শাল অ্যাগ্রোভেট মি. লি শিয়াং নামে যে ব্যক্তিকে বেস্ট কেমিক্যালের রপ্তানি ব্যবস্থাপক (এক্সপোর্ট ম্যানেজার) ও বিটিআই বিশেষজ্ঞ হিসেবে দাবি করেছে, তিনি আসলে বেস্ট কেমিক্যালের কর্মী নন।
প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় মার্শাল অ্যাগ্রোভেটকে ইতিমধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ডিএনসিসি।
মার্শাল অ্যাগ্রোভেট ১৭ আগস্ট ডিএনসিসিকে ব্যাখ্যা দিয়ে একটি চিঠি দেয়। সেখানে তাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা ছিল। ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, মূল পাতায় শুরুতেই লেখা ‘ইম্প্রুভিং ইওর স্ট্র্যাটেজিস, গ্রোয়িং ইওর বিজনেস’। এর নিচেই আরেক বিদেশি ভাষায় কিছু লেখা। ডান দিকে এক বিদেশি ব্যক্তির ছবি।
ওয়েবসাইটের দায়িত্ব দেশীয় এক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের নির্বাহী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি আজ রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পুরোনো ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে গেছে। বছরখানেক আগে তাঁরা নতুন ওয়েবসাইট চালু করেন। সেখানে তথ্য হালানাগাদের কাজ চলছে।
ওয়েবসাইটে ‘সেবার’ জায়গায় কোচিং, কনসাল্টিং, অনলাইন কোর্স ও সার্টিফিকেশনের কথা উল্লেখ রয়েছে। ‘সচরাচর জিজ্ঞাসা’য় প্রশ্নের উত্তর সব বিদেশি ভাষায় লেখা। সেখানে সেবাগ্রহীতাদের লেখাগুলোও বিদেশি ভাষায়।
পুরো সাইটে মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের পরিচিতির জায়গায় শুধু নিজেদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া। তাতে উল্লেখ আছে, ২০০৭ সালে তারা ব্যবসা শুরু করে। এ ছাড়া ‘মিশন’, ‘ভিশন’ ও ‘কমিটমেন্ট’ অংশে নিজেদের সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া। বাকি সব ভিনদেশি তথ্য। শুধু পণ্যের জায়গায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা–সম্পর্কিত কিছু পণ্যের ছবি রয়েছে।
মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ আছে টমাস ওয়ালশ নামের একজন বিদেশির নাম। এ ছাড়া ব্যবসা ব্যবস্থাপক হিসেবে ম্যারি ক্রফোর্ড, কর বিশেষজ্ঞ হিসেবে রিচার্ড প্লেমনস এবং কৌশলগত বিশেষজ্ঞ হিসেবে জ্যাকারি ওভারলির নাম রয়েছে। যাঁদের ছবি গুগল করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় বিভিন্ন নামে।
ওয়েবসাইটটির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশ-বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন টেমপ্লেট কিনে ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে। এ ধরনের টেমপ্লেটে ওয়েবসাইটের ডিজাইন, সম্ভাব্য তথ্য বা ছবির ধারণা দেওয়া থাকে। যারা কেনে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিয়ে তা হালনাগাদ করে নেয়। মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের ওয়েবসাইট দেখেও তা–ই মনে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজেদের ডিজিটাল উপস্থিতির ব্যাপারে এখনো সচেতন নয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে যারা ব্যবসা করে, তাদের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য অনলাইন উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ।