অভিনয়-উপস্থাপনায় পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংসের প্রতিবাদ

দিনব্যাপী কর্মসূচিতে প্রতিবাদী ‘পারফর্মিং আর্টস’ তুলে ধরেন শিল্পীরাছবি: প্রথম আলো

পার্ক ঘিরে থাকা টিনের দেয়াল ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কনটেইনার রাঙানো হয়েছে প্রতিবাদী নানান স্লোগানে। এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সড়ক নির্মাণ করার জন্য রাখা বিভিন্ন সরঞ্জাম ও পাইলিংয়ের জন্য করা গর্ত ব্যবহার করে চলছে অভিনয়। তাতে থাকছে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বের কথা।

আজ শনিবার অভিনব এমন নানা উপায়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংসের প্রতিবাদ জানান একদল শিল্পী।

হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক দিয়ে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। পার্ক ধ্বংস করে এই সড়ক নির্মাণের প্রতিবাদে ৪৪ দিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সদস্যরা। এরই অংশ হিসেবে আজ শিল্পীদের নিয়ে ‘পান্থকুঞ্জে শিল্প তৎপরতা’ শীর্ষক এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী এ কর্মসূচিতে প্রতিবাদী ‘পারফর্মিং আর্টস’ তুলে ধরেন শিল্পীরা। এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সড়ক নির্মাণ বাতিলের পাশাপাশি রাজধানীর ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যান রক্ষার দাবি জানান তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পার্ক ঘিরে রাখা টিনের দেয়াল ও ফেলে রাখা কনটেইনার ‘দাবদাহের কথা মনে রাখার কী দরকার?’, ‘সেভ ট্রিজ অব ঢাকা’ ইত্যাদি নানা স্লোগানে রাঙানো হয়েছে। বিকেল চারটার দিকে শিল্পীরা নানান সাজে সেজে ও সড়ক নির্মাণের জন্য রাখা সরঞ্জাম, পাইলিংয়ের জন্য করা গর্ত ব্যবহার করে অভিনয় করছেন শিল্পীরা।

বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যতম দূষিত এই শহরকে গাছ কেটে নিঃস্ব করার কোনো কারণ দেখি না। দু–একটা পার্ক ছিল, সেগুলোও শেষ করে দিচ্ছে। আমরা চাই ঢাকা শুধু মানুষের জন্য না, পশু-পাখি সবার জন্য বাসযোগ্য হোক।’

আরও পড়ুন

গাছের নানা অংশ দিয়ে ‘গাছমানব’ সেজে অভিনব প্রতিবাদ জানান শিল্পী ওয়ালিদ সাদ্দাম তপু। এই দেশে গাছ কাটাকে সহজভাবে দেখা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাটা নয়, গাছকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার বিচার চাই। যারা গাছ কাটে, তাদের অন্য সব হত্যার মতো শাস্তি দেওয়া না গেলেও অন্তত সামাজিকভাবে “বয়কট” করার মতো শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।’

পার্ক ধ্বংস করে এই সড়ক নির্মাণের প্রতিবাদে ৪৪ দিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সদস্যরা।
ছবি: প্রথম আলো

নড়াই নদীর গল্প’ নামে অভিনয় পরিবেশন করেন ইফাত রেজোয়ানা। ‘নীরব নিশ্বাস’ নামক পারফর্মের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান শিল্পী ফারাহ নাজ মুন। এই উপস্থাপনার মাধ্যমে তিনি শহরের নিশ্বাস নেওয়ার বিষয়ে যে দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে, তা তুলে ধরেন।

মৃত ও কেটে ফেলা বিভিন্ন গাছের পাতা ব্যবহার করে বিশেষ পদ্ধতিতে ছবি তৈরি করেন নাঈম উল হাসান ও ফয়সাল মাহমুদ। এর মধ্যে আছে টিকচাম্বুলগাছ, বট ও পাকুড়গাছের পাতা, ঘাস প্রভৃতি।

প্রতিবাদী অভিনয় ও উপস্থাপনায় আরও ছিলেন শিল্পী আফসানা শারমীন, সুমনা আক্তার, ঋতু সাত্তার, ইফাত রেজোয়ানা, তাহমিনা হাফিজ, মেহেদী মাসুদ, মুহাম্মদ জাকির প্রমুখ।

আরও পড়ুন

আর্ট কিউরেটর ও বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃতির সান্নিধ্যে না থাকলে শিল্পকলার মাধ্যম মরে যাবে। ইট, কাঠ আর পাথরে বসে শিল্পের গল্প বলা যায় না। একটা সবুজ প্রাকৃতিক জায়গা হারালে পারিপার্শ্বিক মানুষদের সংবেদনশীলতা হারাবে। হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ বাঁচলে শিল্পকলার মাধ্যম আরও মুখর হবে।

রাজনীতির লোকজন কেন পরিবেশবিমুখ প্রশ্ন তুলে আমিরুল রাজিব বলেন, নতুন বাংলাদেশে তো সবার আগে থাকার কথা প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ। কেন পরিবেশ কমিশন এখনো হলো না। শিল্পকলার মানুষ কেন সম্মান পেল না। ফুল, পাখি, তরুলতাকে ‘মজলুম’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যত দিন এখানে প্রাণ প্রতিষ্ঠা না হয়, তত দিন তাঁদের আন্দোলন চলবে।