বাড়িছাড়া ৫০ যুবকের খোঁজে কাজ করছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম
ছবি: ডিএমপির ওয়েবসাইট থেকে

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সম্প্রতি যে ৫০ যুবক বাড়ি ছেড়েছেন, তাঁদের খোঁজে কাজ করছে পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজার নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। সেখানে দেশের বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক তরুণের ‘হিজরতের’ নামে ঘর ছাড়ার প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার। আর সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেই তিনি বলেন, দুর্গাপূজা ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

গত মাসের শেষ দিকে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ সাত কলেজছাত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে নতুন করে হিজরতের (দেশত্যাগ বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া) বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসে। এরপর পটুয়াখালী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের আরও সাতজনের দুই থেকে তিন মাস ধরে নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, কুমিল্লার পর পটুয়াখালীসহ অন্যান্য এলাকা থেকে নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে নেমে ৫০ জনের বেশি তরুণের ঘর ছাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকার পুলিশপ্রধান বলেন, ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি দুই ধরনের হয়। একটি জঙ্গি হামলা, অন্যটি ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। জঙ্গি হামলার শঙ্কা আমরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। কারণ, এক মাস ধরে আমরা একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি—৫০ তরুণ বাড়ি ছেড়েছে। তারা কোথায় ট্রেনিং নিচ্ছে, আমরা এখনো তা জানি না। গোয়েন্দারা এ নিয়ে কাজ করছে।’

তবে জঙ্গি হামলার শঙ্কা উড়িয়ে না দিলেও দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার। শফিকুল ইসলাম বলেন, পূজায় অপতৎপরতা ঠেকাতে রাজধানীসহ সারা দেশের ডিসি-এসপিদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপতৎপরতার খবর পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডিসি-এসপিরা ওই সব জায়গায় যাবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করবেন। যাঁরা গুজব ছড়াবেন, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন
(ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম আজ রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজার নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন করেন
ছবি: ডিএমপি নিউজের সৌজন্যে

ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে, ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়ার একটি প্রবণতা সব সময় থাকে। গত বছর কুমিল্লার একটি মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তেমন অপচেষ্টা এ বছরও থাকতে পারে। কোনো পূজামণ্ডপে প্রতিমা থাকা অবস্থায় সেখানে সার্বক্ষণিক মানুষ থাকতে হবে। প্রতিমা বানানোর আগে থেকেই আয়োজকদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর যেসব স্থানে প্রতিমা বানানো হচ্ছে, সেসব স্থানে পুলিশ মোতায়েন আছে। মন্দির কমিটি ও পুলিশের পক্ষ থেকে যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে মনে হয় না কোথাও প্রতিমা ভাঙার আশঙ্কা থাকবে।

আরও পড়ুন

ডিএমপি কমিশনার শফিকুল আরও বলেন, ঢাকা মহানগরে এবার ২৪২টি মণ্ডপে পূজা উদ্‌যাপন হবে। এগুলোর মধ্যে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত পাঁচটি মন্দিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলোতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে নজরদারি করা হবে। পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর, ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে ভিভিআইপি নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। অন্য মন্দিরগুলোতে গুরুত্ব অনুযায়ী কোথাও একজন উপপরিদর্শক (এসআই), কোথাও একজন এএসআইয়ের নেতৃত্বে নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আনসার ও মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকেরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

আরও পড়ুন