জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের দুই শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে রাজধানীতে নাগরিক সংহতি সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারিছবি: দীপু মালাকার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে রাজধানীতে নাগরিক সংহতি সমাবেশ হয়েছে। এতে অংশ নিয়ে বিশিষ্টজনেরা অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও মামলার পাঁয়তারা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য দুর্নীতিবাজ, অসৎ, লুণ্ঠনকারী ও ধর্ষকদের রক্ষার জন্য নানা রকম চেষ্টা করেন। ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অমর্ত্য ও ঋদ্ধরা উন্নয়নের নামে ভয়ংকর প্রাণবিনাশী ও শিক্ষাবিরোধী তৎপরতার বিরোধিতা করে আন্দোলন করেছিল। প্রতিবাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা ও অন্যদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে ফেলা এবং সরকারকে তোয়াজ করা—এই দুই কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট অমর্ত্য ও ঋদ্ধকে বহিষ্কার ও তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের দেয়ালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়ালচিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকার অভিযোগে ২০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারের ঘটনাকে ‘নতুন কালো অধ্যায়’ আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাহসী ছাত্ররা যে সংগ্রাম গড়ে তোলে, সেটিকে দমন করতে যে দেয়ালে ধর্ষকের বিরুদ্ধে আগে লেখা হয়েছিল, সেটা মুছে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নামকাওয়াস্তে ছবি এঁকে তারা (ছাত্রলীগ) মনে করেছিল, সেখানে আর কেউ লিখবে না। সেখানে দেয়াললিখন করায় দুজন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হলো। বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা মিথ্যা।

সমাবেশে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, সরকার খুঁজে খুঁজে ‘মেরুদণ্ডহীন’ ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত করছে। এর ফলে সেই শিক্ষকেরা ভিন্নমতকে দমনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। জাহাঙ্গীরনগরে অমর্ত্য ও ঋদ্ধকে বহিষ্কারের ঘটনাটি এরই ধারাবাহিকতা। প্রতিবাদের প্রকাশ ঠেকাতে এ ঘটনাগুলো ঘটানো হয়।

লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা বলেন, ‘প্রতিবাদের চর্চাটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে হবে। অথচ প্রতিবাদের ভাষার গলা চেপে ধরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবকিছু তো দখল হয়ে গেছে। অন্তত ক্যাম্পাসগুলোর দেয়ালে প্রতিবাদী দেয়ালচিত্র থাকুক।’

আরও পড়ুন

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি জামশেদ আনোয়ারের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাসউদ ইমরান, দর্শনের অধ্যাপক সৈয়দ নিজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ কলেজের শিক্ষক অমূল্য কুমার বৈদ্য, সিপিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শামসুজ্জামান হীরা, সাংবাদিক অঞ্জন রায়, লেখক ও আন্দোলনকর্মী রাখাল রাহা, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণের সাধারণ সম্পাদক অমল আকাশ, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম, বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও পিসিপি নেতা অমল ত্রিপুরা প্রমুখ বক্তব্য দেন।