‘আমার পুরা দুনিয়াটাই এখন অন্ধকার’

দুর্ঘটনায় দুই মেয়ে ঝরণা ও ফাহিমাকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন আকলিমা বেগম
ছবি: খালেদ সরকার

আনন্দে উল্লাসে বড় নাতনি রিয়ামনির বিয়ে দিয়েছিলেন গত শনিবার। সোমবার ছিল তাঁদের বউভাতের অনুষ্ঠান। দুই মেয়ে ফাহিমা (রিয়ার মা) ও ঝরণা, নাতি জাকারিয়া ও জান্নাতুলসহ অনেকেই গিয়েছিলেন সে অনুষ্ঠানে। কিন্তু ফেরার পথে সে আনন্দ রূপ নিল বিষাদে। দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনিকে  হারিয়ে দিশেহারা আকলিমা বেগম।

দুর্ঘটনার পর অন্য সব স্বজনের মতো আকলিমা বেগম বসেছিলেন সড়কের পাশের একটি ভবনের সামনে। শোকে পাথর জাহানারা বেগম মাঝেমধ্যেই বিলাপ করছিলেন। কখনো ছুটে যাচ্ছিলেন নিহতদের লাশের দিকে, কখনোবা মেঝেতে বসে ডাকছিলেন সৃষ্টিকর্তাকে। এর মধ্যেই অনেকে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।

আকলিমা বেগম বলতে থাকেন, ‘আমার সন্তানের কি দোষ আছিল? কেমনে এইড্যা (গার্ডার) গাড়ির ওপর পড়ল? আমরা কার কাছে বিচার চামু, কই যামু, আমার তো সব শেষ। অনুষ্ঠানে আইবো দেইখা, আমার নাতিগুলা যে কী খুশি ছিল! সকাল থেইকাই নতুন কাপড় পইরা রেডি। সবাই কী হাসিখুশি। কিন্তু এমনভাবে সব শেষ হইয়া যাইবো, তা ভাববারই পারি নাই। ও আল্লাহ, আমি এখন কি নিয়া বাঁচুম।’

আকলিমা বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, ‘মাইয়াগুলারে অনেক কষ্ট কইরা বড় কইর‍া তুলছি। নাতিগুলা আমার কাছে আসলে সারা বাড়ি মাতায় রাখত। এখন তারা নাই। আমার পুরো দুনিয়াটাই এখন অন্ধকার।’

আরও পড়ুন

সোমবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়ালসড়কের গার্ডারটি ক্রেন দিয়ে ওপরে তোলার সময় সেটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। ঢাকার দক্ষিণখানের কাওলা এলাকায় বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে নবদম্পতি ও তাঁদের পাঁচ স্বজন ওই গাড়ি করে আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পরপর নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনিকে (২১) গাড়ি থেকে বের করা হয়। তাঁরা উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দুজনই শঙ্কামুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে ঘটনার সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় পর গার্ডার সরিয়ে প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে আকলিমা বেগম বলেন, তাঁদের বাড়ি আশুলিয়ার চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায়। তাঁর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। এর মাঝে বড় মেয়ে ফাহিমার মেয়ে রিয়ামনি। গত শনিবার রিয়ার বিয়ে হয় রাজধানীর কাওলার হৃদয়ের সঙ্গে। আজ সোমবার কাওলায় হৃদয়দের বাড়িতে ছিল বউভাত অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি, তাঁর মেয়ে ফাহিমা, ঝরণা, ঝরণার দুই ছেলে-মেয়ে জাকারিয়া ও জান্নাতুলসহ অনেকেই বউভাতে যান। ফেরার পথে ফাহিমা, তাঁর মেয়ে রিয়ামনি, রিয়ার স্বামী হৃদয়, হৃদয়ের বাবা রুবেল, আরেক মেয়ে ঝরণা ও তাঁর ছেলে-মেয়ে জাকারিয়া ও জান্নাতুলসহ মোট সাতজন এক গাড়িতে যাচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন