আওয়ামী লীগ নেতার হাতে ভবনের ‘নিয়ন্ত্রণ’

সায়েন্স ল্যাব এলাকার তিনতলা একটি ভবনে বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেনছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত তিনতলা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বিস্ফোরণে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘জমে থাকা গ্যাস’। কিন্তু কোথা থেকে গ্যাস জমেছিল, সেটা গতকাল পর্যন্ত বের করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত রোববার বিস্ফোরণের পরপর ভবনটি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। কিন্তু গতকাল সোমবার সকাল থেকে ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম ওরফে লিটনের হাতে চলে গেছে বলে ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলছে। ভবনের ফটকে লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাশেম। তিনি ভবনের ব্যবসায়ীদেরও কাউকে আশপাশে ভিড়তে দিচ্ছেন না। ফটকের চাবিও তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত শিরিন ভবনের নিচতলার একজন কাপড় ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবুল হাশেম ভবনের মালিকের পক্ষে প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন। আমরা এখানে ঘরভাড়া নিয়ে ব্যবসা করি, আমাদের আশপাশেই ভিড়তে দিচ্ছেন না। উল্টা ধমকাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা। পাশেই আমার বাসা। তাই আমি নিজ থেকে এখানে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছি।’

তবে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সেখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, এমন কিছু তাঁর জানা নেই।

জানা গেছে, ওই ভবনের মালিক শিরিন সুলতানা আমেরিকায় থাকেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম। তিনি গতকাল টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, ওই ভবনের তৃতীয় তলায় দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। দোতলায় একটি দরজির দোকানসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর নিচতলায় রয়েছে পাঁচটি কাপড়ের দোকান।

আরও পড়ুন

এর মধ্যে তিনতলার পুরোটাই বিধ্বস্ত হয়েছে। দোতলার প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোতলার বেস্ট টেইলার্সের মালিক আবদুর রশীদ জানান, ২০১৫ সাল থেকে তিনি এই ভবনে ব্যবসা করছেন। সেখানে তাঁর কাপড়ের একটা গুদামও ছিল। তিনি বলেন, ‘রমজান ও ঈদ সামনে রেখে কয়েক দিন আগে ৫০ লাখ টাকার কাপড় তুলেছি। আগের ছিল প্রায় ২৭ লাখ টাকার কাপড়। এখন সব নষ্ট হয়ে গেছে। দোকানের সিলিংসহ সব ভেঙে গেছে।’

গত রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে শিরিন ভবনের তিনতলায়। এতে তিনজন নিহত হন। আহত হন ১৫ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকা ছয়জন এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন আবাসিক সার্জন এস এম আইয়ুব হোসেন।

আরও পড়ুন

ঘটনার পর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয় দলের কর্মকর্তারা জানান, জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে সেই গ্যাস কোথা থেকে কীভাবে নির্গত হয়েছে এবং কোথায় সেটা জমেছিল, সেটা এখনো উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের একটি সূত্র জানায়, তাদের অনুসন্ধানে ওই ভবনে মিথেন ও কার্বন মনোক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুরোনো ও অব্যহৃত গ্যাসের লাইনের ছিদ্র থেকে বা পয়োনালা থেকে শৌচাগারের পাইপে দিয়ে নির্গত গ্যাস কুণ্ডলী হয়ে ছিল তৃতীয় তলার কোনো একটা ছোট স্থানে জমা হয়েছিল। আবার শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকেও কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হতে পারে। গ্যাসের কুণ্ডলী কোনো ধরনের স্ফুলিঙ্গের (স্পার্কিং) সংস্পর্শে এলে সেটা বিস্ফোরণে রূপ নেয়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, কীভাবে ওই ভবনে গ্যাস জমেছিল, সেটা তারাও তদন্ত করে দেখছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল নিউমার্কেট থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) হয়েছে বলে জানান রমনা বিভাগের উপকমিশনার শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, জিডির তদন্ত শেষে প্রয়োজনে মামলা হবে।