স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, যাঁরা কথায় কথায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন, তাঁদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের হত্যার বিচার তাঁদের সন্তানেরা জীবিত অবস্থায় দেখে যেতে পারবেন।
আজ সোমবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যার’ প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ’।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, দেশে এখন সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করছেন। সুতরাং, যাঁরা অন্যায়ভাবে ক্যু করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের খুন করেছেন, তাঁদের বিচার অবশ্যই হবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলহত্যা, ৭ নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা এবং ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা—সবই একই সুতোয়, একই ধারাবাহিকতায় গাঁথা।’
আসাদুজ্জামান নূর আরও বলেন, ‘ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, জিয়াউর রহমানকে (বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি) অনেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। আমি মনে করি, তিনি ছিলেন পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে একজন অনুপ্রবেশকারী, যিনি আমাদের ভেতরে প্রবেশ করে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে মিলে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ২০১৩-১৪ সালে যে আগুন–সন্ত্রাস, হত্যা ও নারকীয় ঘটনাগুলো বিএনপি-জামায়াত করেছিল, এগুলোও একই সূত্রে গাঁথা। যে দল গণতন্ত্রের নামে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করে, ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। এই দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার ওপর হামলা হয়েছে। তার কারণ হলো আমি এক রায়ে জিয়াকে ঠান্ডা মাথার খুনি বলে অভিহিত করেছিলাম। এই রায় তো সারা জীবন বেঁচে থাকবে, যেটি খুনি জিয়ার লোকদের পছন্দ হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার দায়ে খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার দাবি করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে জিয়াউর রহমানের নামে একটি সড়ক ছিল জানিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ওয়াশিংটন কর্তৃপক্ষ যখন জানতে পারল জিয়া ঠান্ডা মাথার খুনি, তখন ছয় মাস আগে সেই রাস্তার নাম পরিবর্তন করেছে।’
গতিপথ বদলে দেওয়া ৭ নভেম্বর
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি ও ষড়যন্ত্রকারী’ বলে মন্তব্য করেন মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান (বীর বিক্রম)। তিনি বলেন, ‘জিয়ার তথাকথিত কবর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে অপসারণ করতে হবে।’
জার্নি পাবলিকেশনের চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। এতে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন ৭ নভেম্বর নিহত কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান এবং মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর ও ‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের কন্যা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদও।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম ও গবেষক আনোয়ার কবির।