গৃহকর্মী বেশে ঘরে ঢুকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে সটকে পড়েছেন তিনি

আছিয়া বেগম নামে পরিচয় দিয়ে দেড় লাখ টাকা নিয়ে সটকে পড়েন এই নারী
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা নৈমূল আহসান। বাসায় একজন গৃহকর্মীর প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের জানিয়ে রেখেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কয়েক দিন পরেই একজন নারী কাজের খোঁজে আসেন নিরাপত্তারক্ষীর কাছে। ওই নারী নিজেকে আছিয়া বেগম নামে পরিচয় দেন।

খন্ডকালীন কাজ নিয়ে আছিয়া বেগম কথা বলেন সৈয়দ নৈমূল আহসানের স্ত্রী রেহানা বেগমের সঙ্গে। সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিদিন এসে বাসার দুটি কাজ করবেন তিনি। এ সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি চাওয়া হলে তিনি জানান, সঙ্গে নেই। পরে নিয়ে আসবেন। গ্রামের ঠিকানা বলেন মাদারীপুরের শিবচরে।

আছিয়া বেগম বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙনে তাদের বাড়ি ভেঙে গেছে। তাই রাজধানীতে কাজ খুঁজতে এসেছেন। আপাতত কয়েকজনের সঙ্গে পল্টন মসজিদের গলিতে মাথা গোজার ঠাঁই নিয়েছেন।

এই ঘটনা গত রোববার বেলা ১২টার দিকের। ওই দিন কথাবার্তা শেষে আছিয়াকে পরের দিন সোমবার থেকে কাজে আসতে বলেন রেহানা বেগম। কিন্তু ওই দিন থেকেই কাজ শুরু করেন তিনি। ঘর ঝাড়া–মোছার কথা না থাকলেও তিনি নিজ উদ্যোগে এ কাজ করেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই দিন বাসার বিভিন্ন কক্ষে ৫ জন সদস্য যে যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আর রেহানা বেগম ছিলেন খাবার কক্ষে। সেখানে বসে কোরআন শরিফ পড়ছিলেন তিনি।

রেহানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন  ‘আমার বেডরুমে থাকা ওয়ার্ডরোব মুছতে গেলে আমি তাঁকে (আছিয়াকে) নিষেধ করি। সে বলে এগুলো পরিষ্কার করে ঘর মুছবে। আমি আবার কোরআন শরিফ পড়ায় মন দেই। আমার ছেলে–মেয়েরা সবাই তখন যার যার কক্ষে। পরের দিন সে আবার কাজে আসবে বলে ঘণ্টা দুই পর চলে যায়। তখনো কিছুই বুঝতে পারিনি।’

আছিয়া চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর নিজের শয়ন কক্ষে যান রেহানা বেগম। দেখেন ওয়ার্ডরোবের ওপরে রাখা ব্যাগটি নেই। পরে সেটি খুঁজে পান খাটের নিচে। খুলে দেখেন ব্যাগের পকেটে থাকা ৪০ হাজার টাকা গায়েব। ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ারে রাখা এক লাখ টাকারও হদিস নেই।

আরও পড়ুন

কাজ শেষ করে দুপুর ২টার দিকে বাসা ছেড়ে যান আছিয়া। এ সময় তাঁর মুঠোফোন নম্বর চেয়েছিলেন গৃহকর্ত্রী রেহানা। সে জানায়, নম্বর মুখস্থ নেই। পরে লিখে নিয়ে আসবেন।  টাকা উধাও হওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে তাঁর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়।

ওই বাসার নিরাপত্তারক্ষী শাহজাহান জানান, আছিয়া নামের ওই নারীকে তিনি চেনেন না। আগে কখনো দেখেননি। সেদিনই প্রথম এসে কাজের সন্ধান করেছেন। শুধু বলেছেন, মান্ডা এলাকায় থাকেন। অথচ আছিয়া গৃহকর্ত্রী রেহানা বেগমকে বলেছিলেন, তিন পল্টন মসজিদের গলিতে থাকেন।

শয়নকক্ষ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় ঘটনায় এখনো বিস্ময় কাটেনি রেহানা বেগমের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ধারণা এটা একটা গ্যাংয়ের (চক্র) কাজ। ওরা আগে থেকে সব খোঁজ–খবর নিয়ে আসে। এতগুলা মানুষের উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই সে টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। অন্য কোথাও খুঁজেও দেখেনি।’

রেহানা বেগমের ছেলে সৈয়দ রাহাতুল আশেকিন প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর নাম, ঠিকানা সবই তো মিথ্যা। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরও নেই। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাঁর চেহারা বোঝা যাচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ওই নারীর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এতদিনে থানায় কোনো মামলাও হয়নি। জানতে চাইলে সৈয়দ রাহাতুল আশেকিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম মামলা করে কোনো লাভ হবে না। যেহেতু ওই নারীর নাম–ঠিকানা সবই ভুয়া। তবে এখন মনে হচ্ছে এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আমরা পুলিশের কাছে যাব।’

আরও পড়ুন