মাকে হারানোর সপ্তাহ না পেরোতেই একই রোগে হাসপাতালে রুদ্র

মায়ের মৃত্যুর পর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ছেলে রুদ্র রায়। আজ শনিবার চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকার একটি হাসপাতালে
ছবি: সৌরভ দাশ

দিন দশেক আগে ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে মায়ের প্রাণ। ছেলে রুদ্র রায়ের শরীরে এখন তাঁর স্মৃতি—সাদা কাপড় আর উত্তরীয়। এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে সে–ও। খুব কাছ থেকে মায়ের পরিণতি দেখেছে। তাই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অজানা এক শঙ্কা কাজ করছে তার মনে।

রুদ্র (১৭) উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা সে। গত বুধবার থেকে ভর্তি রয়েছে নগরের জামালখান এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। গত ২১ আগস্ট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তার মা তৃষ্ণা রানী রায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের অসুস্থতার সময় পাশে ছিল রুদ্রই।

আরও পড়ুন

মা মারা যাওয়ার পর এক সপ্তাহ গড়াতেই গত মঙ্গলবার রুদ্রর জ্বর আসে। ভয় পেয়ে যান তার বাবা রাজেন্দ্র প্রসাদ রায়। কারণ, স্ত্রী তৃষ্ণাকে হাসপাতালে নিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। তাই ছেলেকে সেদিনই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পরদিন হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আজ শনিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রুদ্রর সেবা করছেন বাবা রাজেন্দ্র প্রসাদ। ছেলের অসুখের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা অফিসেও যাচ্ছেন না। স্ত্রী না থাকায় ছেলেকে দেখভালের ভার পড়েছে তাঁর ওপর। কখনো ডাব কেটে দিচ্ছেন। কখনো আবার শরবত তুলে দিচ্ছেন ছেলের মুখে।

আরও পড়ুন

রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পর রুদ্রর জ্বর আসে। সঙ্গে পাতলা পায়খানাও হয়। ডেঙ্গু পজিটিভ আসার পর আর দেরি করিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিই। এখন ও আগের চেয়ে সুস্থ আছে।’

রুদ্রর ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিদ্র রায়েরও জ্বর এসেছিল। তবে তার ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে। সে এখন দক্ষিণ কাট্টলীর বাসায় আছে। রুদ্র বলে, ‘মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। কিন্তু কিছু করার নেই। মা তো আর ফিরবে না।’

আগামী মঙ্গলবার তৃষ্ণা রায়ের পারলৌকিক শ্রাদ্ধ। এর আগে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে চায় রুদ্র। এখন তার রক্তে অণুচক্রিকা বাড়ছে। তারপরও অজানা ভয় যেন পরিবারটিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেন, ‘বিপদ যখন আসে, সব দিক থেকে আসে। স্ত্রী চলে গেল। ছেলেরও ডেঙ্গু। মনের অবস্থা কি আর ভালো থাকে! সবাই যেন ভালো থাকে। ডেঙ্গু হলেই যেন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে চলে যায়।’

আরও পড়ুন