রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেট কারের ওপর নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনায় চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্না আক্তারের ভাই আফরান মন্ডল বাবু। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্রেন চালকও রয়েছেন।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচজন নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। জড়িতদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মামলার বাদী আফরান মন্ডল বাবু বলেন, সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টর জসিমউদ্দিন সড়কের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে তাঁর দুই বোনসহ স্বজনদের বহনকারী প্রাইভেটকারের ওপর বিআরটি প্রকল্পের একটি বক্স গার্ডার পড়ে সেটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর ভাগনি রিয়া আক্তার (১৯) ও রিয়ার স্বামী রেজাউল করিম হৃদয়কে (২৬) প্রাইভেটকার থেকে বের করা গেলেও আর পাঁচজনকে বের করা সম্ভব হয়নি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে একটি চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি কাজ করছে। এই কাজের অংশ হিসেবে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী রাস্তায় বক্সগার্ডার একটি ক্রেনের সাহায্যে লোবেট ট্রাকে ওঠানো হচ্ছিল।
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে সড়কে যান চলাচলের সময় ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করা হচ্ছিল। তাঁর স্বজনদের বহনকারী গাড়িটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বক্স গার্ডার গাড়িটির চালকের আসনসহ পেছনের আসনের অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে আছড়ে পড়ে। ফলে ঘটনাস্থলেই গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা ৭ জনের মধ্যে ৫ জন নিহত হন। আসামিদের অবহেলার কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। ক্রেনের চালক, সিজিসিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়েছে।
নিহতদের পরিচয়
পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা জানাতে পারেনি। দুটি সংস্থা থেকেই নিহতদের আংশিক নাম জানানো হয়েছিল। তবে রাতে থানা থেকে নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় জানিয়েছে।
মামলার এজাহার অনুসারে নিহতদের মধ্যে চালকের আসনে ছিলেন বেঁচে যাওয়া রেজাউল করিম হৃদয়ের বাবা এবং রিয়া আক্তারের শ্বশুর আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫)। পেছনে বসেছিলেন হৃদয়ের শাশুড়ি ও রিয়ার মা ফাহিমা আক্তার (৩৮), ফাহিমার বোন ঝর্না আক্তার (২৭), ঝর্না আক্তারের দুই শিশু সন্তান জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁদের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।