আওয়ামী লীগ নেতা দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চান পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, ছেলেভোলানো গল্প তাঁরা শুনবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তাঁদের সন্তুষ্ট করতে হবে, আসলে কী হয়েছিল।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এমন কথা বলেন দুরন্ত বিপ্লবের স্ত্রী শারমিন তামান্না ও ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব। ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, নাট্যস্নাতক মঞ্চ ও সতীর্থ উনিশ’ ব্যানারে মানববন্ধনটি হয়।
দুরন্ত বিপ্লবের স্ত্রী বলেন, ‘কে তাঁর এমন শত্রু, মেরে ভাসিয়ে দেবে। আমরা চিনতেও পারব না, শেষবারের মতো আঙুলটি ছুঁয়েও দেখতে পারব না। আমরা সত্যটা জানতে চাই।’
১২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে দুরন্ত বিপ্লবের লাশ উদ্ধারের করে নৌ পুলিশ। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সদস্য পদে ছিলেন। পড়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে শারমিন তামান্না বলেন, যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। স্বামীর রাজনীতি–সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু পাওয়ার জন্য নয়, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে আওয়ামী লীগ করতেন তাঁর স্বামী।
বড় ভাইয়ের বিচারের দাবি জানাতে শাহবাগে দাঁড়াতে হবে—এটি কখনো ভাবেননি উল্লেখ করে মানববন্ধনে দুরন্ত বিপ্লবের ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজনীতি করা ছেলে। সুসময়ে কোনো সুবিধা নেয়নি। আওয়ামী লীগের পোড়খাওয়া কর্মীদের যদি এভাবে মরে যেতে হয়, এই দেশে আমরা কেন থাকব?’ তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আরেকটি সংস্থা বলছে, নৌকা ডুবে তিনি মারা গেছেন। এক সংস্থার তথ্য আরেক সংস্থার তথ্যের সঙ্গে মিলছে না। শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘তথ্য–প্রমাণ দিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে তিনি ডুবে মারা গেছেন। ছেলেভোলানো গল্প আমরা শুনব না।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘আপনারা চেষ্টা করছেন, এ জন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু দুরন্ত বিপ্লবকে যদি হত্যা করা না হয়, তাহলে আপনারা জনসমক্ষে বলুন, ময়নাতদন্ত ভুল ছিল। আর ময়নাতদন্ত সঠিক হলে নৌকাডুবির গল্প শুনিয়ে লাভ নেই।’
লাশ উদ্ধারের পর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত হয় দুরন্ত বিপ্লবের। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মফিজুল উদ্দিন প্রধান ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, সমান কোনো বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে।
মানববন্ধনে দুরন্ত বিপ্লবের হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে সাত দিনের সময় বেঁধে দেন অংশগ্রহণকারীরা। এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদি জামিল বলেন, দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যার মাধ্যমে একটি স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যার বিচার দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে তথ্য উদ্ঘাটন করুন, না হলে আন্দোলন থামবে না।’
মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘দলমত–নির্বিশেষে সবাই আমরা হত্যার বিচার চাই। এটি কোনো অপমৃত্যু নয়, হত্যা।’ মানববন্ধনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নাট্যকার ইফফাত আরেফিন। হত্যার বিচার চেয়ে বক্তব্য দেন নাট্যস্নাতক মঞ্চের আহ্বায়ক এহসানুর রহমান।