ব্যাংক কর্মকর্তা দীপুর মৃত্যুরহস্যের জট ৭ মাসেও খোলেনি
রাজধানীতে ব্যাংক কর্মকর্তা দীপু সানার মৃত্যুরহস্যের জট সাত মাসেও খোলেনি। এতে হতাশ পরিবার।
গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মালিবাগের মৌচাক এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে কংক্রিটের খণ্ড মাথায় পড়লে দীপুর মৃত্যু হয়। কোথা থেকে কীভাবে কংক্রিটের খণ্ড তাঁর মাথায় এসে পড়ল, সেই তথ্য এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
খুলনার মেয়ে দীপু (৩৩) বাংলাদেশ ব্যাংকের ঢাকার সদরঘাট শাখায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তিনি কর্মস্থল থেকে অফিসের বাসে করে এসে শান্তিনগরে নামেন। পরে হেঁটে মগবাজারের গাবতলার বাসায় ফিরছিলেন। মৌচাক এলাকার উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় ওপর থেকে তাঁর মাথায় কংক্রিটের খণ্ড পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। মামলার বাদী দীপুর স্বামী তরুণ কুমার। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করছিল রমনা থানা-পুলিশ। পরে মামলার তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) রমনা বিভাগ।
১০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের ক্লোজড সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) ক্যামেরার একটি ফুটেজে দেখা যায়, মালিবাগ-মৌচাক উড়ালসড়ক বরাবর নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন দীপু। একপর্যায়ে ওপর থেকে কংক্রিটের একটি খণ্ড তাঁর মাথায় পড়লে তিনি লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তাঁকে ঘিরে পথচারীরা ভিড় করেন। তাঁকে অচেতন অবস্থায় একটি রিকশায় তুলতে দেখা যায় কয়েকজনকে।
প্রায় কাছাকাছি সময়ের আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে মালিবাগ-মৌচাক উড়ালসড়ক ধরে এক ব্যক্তিকে মগবাজারের দিকে দৌড়াতে দেখা যায়।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি বলছে, ধারণা করা হচ্ছে, উড়ালসড়ক থেকে কংক্রিটের খণ্ডটি দীপুর মাথায় পড়ে। আর সিসিটিভি ফুটেজে যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে উড়ালসড়ক ধরে দৌড়াতে দেখা যায়, তাঁকে খুঁজছে পুলিশ।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওপর থেকে কংক্রিটের খণ্ডটি দীপুর মাথায় পড়েছে। কিন্তু ওপরের কোন স্থান থেকে সেটি পড়েছে, তা ফুটেজে নেই। এ ঘটনায় কাছের ফখরুদ্দিন পার্টি সেন্টারের কর্মীসহ আশপাশের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ কংক্রিটের খণ্ডটি কোত্থেকে পড়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।
মামলাটি তদন্ত করছিলেন ডিবির রমনা বিভাগের পরিদর্শক তারিকুল আলম। গত সোমবার তিনি ডিবির লালবাগ বিভাগে বদলি হন। গতকাল মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কংক্রিটের খণ্ডটি কোথা থেকে পড়ল, আর উড়ালসড়ক ধরে দৌড়ানো ব্যক্তিই-বা কে—তার কিছুই শনাক্ত করা যায়নি। সবর্শেষ তিনি প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছিলেন।
সাত মাসেও মামলার কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন দীপুর স্বামী তরুণ কুমার। তিনি ঢাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। দীপু-তরুণের তিন বছর বয়সী একটি সন্তান আছে। শিশুটি কথা বলতে পারে না। তাকে স্পিচ থেরাপি দেওয়া হচ্ছে।
তরুণ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত নিয়ে ডিবি এখন আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে না। কোথা থেকে কীভাবে কংক্রিটের খণ্ডটি দীপুর মাথায় পড়ল, এর সঙ্গে কেউ জড়িত কি না, তা পুলিশ এখনো বের করতে না পারায় তাঁরা খুবই হতাশ। তবুও তাঁরা আশা করছেন, পুলিশ দ্রুত রহস্য উন্মোচন করবে।