‘আশায় আছি যদি বিচার পাই’

স্ত্রী–শিশুসন্তানসহ ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল হাসান
ফাইল ছবি

হঠাৎ পেছন থেকে রিকশায় প্রচণ্ড ধাক্কা। ফখরুল হাসানের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী ছেলেশিশুটি প্রায় দুই হাত দূরে ছিটকে পড়ে। এতে শিশুটির ডান পায়ের ঊরুর হাড় ভেঙে যায়। বাবার ভাঙে ডান হাত। দুধের শিশুটির মাথা ও কানের আঘাতও ছিল গুরুতর।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর রাজধানীতে ঘটেছিল এ ঘটনা। শিশুটির বয়স এখন ১৬ মাস। একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে সে। বাবার হাতের ব্যথা সারেনি; আরও সময় লাগবে।

ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল হাসান জানালেন, ওই দিনের ঘটনা একজন ভিডিও করেছিলেন। কোল থেকে ছেলের ছিটকে পড়ার ভিডিওটি দেখলে এখনো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ওই ঘটনায় রিকশাচালক আনোয়ার ইসলামও গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।

ঘটনার পরদিন ২০ নভেম্বর ফখরুল সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮/১০৫ ধারায় বেপরোয়াভাবে বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগে রমনা থানায় মামলা করেন।

গতকাল রোববার ফখরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমার বুক কতটা ধড়ফর করে, তা শুধু আমি জানি। কিন্তু জীবিকার তাগিদে বাইরে তো যেতেই হয়। চোখের সামনে এত দুর্ঘটনা, অসহায় মানুষের কান্নাকাটি, আর কোনো সদস্য মারা গেলে ওই পরিবারকে তো সারা জীবন তাদের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিচার পাবে না বলে অনেকে তো মামলাই করেন না। অনেকে মামলার ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চান। তবে আমি আমার ও ছেলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার চাই। আপসের জন্য চাপ থাকলেও কোনোভাবেই এ নিয়ে আপস করব না।’

ফখরুল পরিবার নিয়ে সিদ্ধেশ্বরীতে থাকেন। তিনি নরসিংদীর মাধবদী শাখার শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী রোকাইয়া আক্তার পেশায় চিকিৎসক।

ঘটনার দিন ছেলেকে নিয়ে রমনা পার্কে যাচ্ছিলেন ফখরুল। বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমির সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। যে গাড়িটি তাঁদের রিকশাকে ধাক্কা দেয়, সেটি চালাচ্ছিল এক কিশোর। ওই কিশোরের বাবা সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।

গত বছরের ২২ নভেম্বর ওই কিশোরকে টঙ্গী শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬-এর বিচারক আল মামুন। কিশোর ছেলের গাড়ি চালানো প্রসঙ্গে আদালত কিশোরের বাবার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘অন্যায় আপনি করেছেন, অপরাধ আপনি করেছেন। এর জন্য শাস্তি তো আপনার হওয়া উচিত।’

মামলার বাদী ফখরুল বললেন, ‘আমাদের বাবা ও ছেলের চিকিৎসা ও মামলার পেছনে এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এরপরও আমি এর শেষ দেখতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশ, যার জোর নাই, তাকে ধৈর্য ধরতে হয়, আশায় আছি যদি বিচার পাই।’

আরও পড়ুন

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, দুর্ঘটনার পরদিন ওই কিশোর মায়ের সঙ্গে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় দাদাবাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় খালাবাড়িতে আত্মগোপনে ছিল। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) বিপ্লব সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাস আগেই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি ওই কিশোর জামিন পেয়েছে। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তার আইনজীবী বাবা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে তো অবশ্যই ভুল করেছে। ওর মধ্যেও অনুশোচনা কাজ করছে। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনায় আহত বাচ্চাটিকে দেখতে চায়, কিন্তু বাচ্চার বাবা আমার ফোন ধরেন না। এ ঘটনায় মানসম্মান নষ্ট হওয়াসহ অনেক ঝড়ঝাপটা আমাদেরও সহ্য করতে হচ্ছে। দুর্ঘটনায় দুটি পরিবার ভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’