‘বাসের জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, জানি না’

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যশোরে গ্রামের বাড়ি যাবেন আবির হোসেন। তিনি যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড়ের সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারে আসেন সকাল আটটায়। বেলা ১১টায় বাস আসেনি কাউন্টারে।
ছবি: আসাদুজ্জামান

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আবির হোসেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি যশোরে। আগেই তিনি সোহাগ পরিবহনের একটি টিকিট অগ্রিম কিনে রেখেছিলেন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় তাঁর বাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে খুলনা-যশোরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।

বৃষ্টিতে ভিজে সকাল আটটায় সোহাগ পরিবহনের যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় কাউন্টারে আসেন তিনি। এক ঘণ্টা যায়, দুই ঘণ্টা যায়, গাড়ির দেখা আর পাচ্ছিলেন না আবির। একপর্যায়ে অধৈর্য হয়ে পড়েন তিনি।

সোহাগ পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা নূরে আলমকে উদ্দেশ্য করে আবির বলেন, ‘ভাই, আমার গাড়ি আসবার কথা সকাল সাড়ে ৮টায়, এখন বেলা ১১টা। ভাই, আমার গাড়ি কয়টায় আসবে?’

নিরুপায় টিকিট বিক্রেতা নূরে আলম জবাব দেন, ‘ভাই, ঈদের সময়। রাস্তায় অনেক জ্যাম (যানজট)। মালিবাগ, মানিকনগর, সায়েদাবাদে অনেক জ্যাম।’
টিকিট বিক্রেতার এ কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে আবির বলেন, ‘আমি যখন কাউন্টারে এসেছি, তখনই বলতে পারতেন, গাড়ি আসতে কিন্তু দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরি হবে...।’

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে সড়কপথে বাড়ি ফেরার জন্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যেসব যাত্রী সায়েদাবাদ কিংবা যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড়ে এসেছেন, তাঁদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি তাঁদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।

শ্যামলী পরিবহনের সায়েদাবাদ কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা তরুণ হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, মানিকনগরে গরুর হাট বসেছে। রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। এ জন্য সায়েদবাদ বাস কাউন্টারে গাড়ি ছাড়তে দেরি হচ্ছে।

আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় ও সায়েদাবাদ ঘুরে দেখা যায়, ঘরমুখো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। বৃষ্টিতে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।

বরিশালের বাকেরগঞ্জের বাসিন্দা মেহেদী হাসান ঢাকায় একটি সরকারি প্রকল্পে চাকরি করেন। তিনি সকাল সাড়ে আটটায় হানিফ পরিবহনের সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাঁর বাস আসেনি। মেহেদী হাসান বলছিলেন, গাড়ি কখন আসবে, তিনি জানেন না। কেউ বলতেও পারছেন না।

হানিফ পরিবহনের সায়েদাবাদ কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা তারিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে যে বাসগুলো যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে, সেই বাসগুলো ফিরতে অনেক দেরি হচ্ছে। বিশেষ করে, ধোলাইপাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসগুলো আটকে থাকছে।

আরও পড়ুন

সায়েদাবাদের বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার মানিকনগরসহ বিভিন্ন স্থানে গরুর হাট বসেছে। এতে যানজট অনেক বেড়ে গেছে। এতে সব বাসই দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় ছেড়ে যাচ্ছে।

তিন ধরে একই অবস্থা উল্লেখ করে সৌদিয়া পরিবহনের সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সব গাড়ি আটকে যাচ্ছে যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড়ে। তিন থেকে চার ঘণ্টা গাড়িগুলো আটকে থাকছে সেখানে, ধোলাইপাড় এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

পটুয়াখালীর নিপা আক্তার দেড় বছরের কোলের শিশু নিয়ে আজিমপুর থেকে সায়েদাবাদের সৌদিয়া পরিবহনের কাউন্টারে আসেন সকাল ১০টায়। পটুয়াখালীর উদ্দেশে তাঁর বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল বেলা ১১টায়।

দুপুর ১২টার সময়ও বাসের দেখা পাননি নিপা আক্তার। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে এই যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস কখন আসবে কাউন্টারে, তা-ও বলতে পারছেন না বাসের লোকজন। এই ছোট্ট শিশু নিয়ে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, জানি না।’