জাহিদুল হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে

জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপুফাইল ছবি

ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যা মামলায় বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। আগামী ২৫ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের শুনানির নতুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩–এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন আজ বুধবার এ আদেশ দেন। আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিক উদ্দিন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রফিক উদ্দিন বলেন, এই মামলায় কারাগারে থাকা আসামি ইসতিয়াক আহম্মেদকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এ কারণে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন পিছিয়েছে। নতুন করে ২৫ এপ্রিল এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই মামলায় আট আসামি জামিনে আছেন, ছয় আসামি পলাতক। কারাগারে আছেন ১৯ আসামি।

২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

এক বছরের বেশি সময় পর গত বছরের ৫ জুন ঢাকার সিএমএম আদালতে এই মামলায় পুলিশের তালিকাভুক্ত দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মামলার অভিযোগপত্রের তথ্য ও ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মতিঝিলকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক আধিপত্য—এ দুই কারণে জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। হত্যার পরিকল্পনায় বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ও জাফর আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৩০ জনের নাম এসেছে। আর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন তিনজন। সুমন শিকদার ওরফে মুসা পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন।

আরও পড়ুন

ডিবির তথ্যমতে, হত্যার ঘটনায় কয়জন অংশ নিয়েছিলেন, পরিকল্পনায় কারা ছিলেন, হত্যাকাণ্ডে কার কী ভূমিকা ছিল—দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে তদন্ত করে সেসব তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নে একেকজনের একেক ধরনের ভূমিকা ছিল। এ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, তাঁর বন্ধু মোল্লা শামীম ও পলাশ ওরফে কাল্লা পলাশ। অন্যরা সবাই ছিলেন এ হত্যার পরিকল্পনাকারী।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিবি ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর জবানবন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী সুমন শিকদারের (মুসা) নাম আসে। ডিবি ওমান থেকে গ্রেপ্তার করে গত বছরের জুনে ঢাকায় আনার পর আদালতে জবানবন্দি দেন মুসা। তাঁর জবানবন্দিতে এই হত্যায় জড়িত ১৬ জনের নাম উঠে আসে। তাঁদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ ও র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ২৫ আসামি।

আরও পড়ুন

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে আছেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬), মারুফ রেজা সাগর (৪০), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (88), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), ইসতিয়াক আহম্মেদ ওরফে জিতু (৩৯) ও ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২), হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), মোরশেদুল আলম পলাশ (৫১), রাকিবুর রহমান (৩১), জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে এমদাদুল হক (৫০), জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক (৪৫), গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮), মারুফ আহমেদ মনসুর (৫৭), রিফতি হোসেন (৩৮), সোহেল ওরফে রানা মোল্লা (৪৫), আমিনুল ইসলাম (৩৫), সামসুল হায়দার (৪১) ও কামরুজ্জামান (৬২)।

আরও পড়ুন