ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ১৫ মিনিট শাহবাগ মোড় অবরোধ
ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ১৫ মিনিটের জন্য অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ের সড়ক থেকে সরে যান।
এর আগে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মো. নকিব মাইকে বলেন, রমজানে মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তাঁরা আবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করবেন।
পরে শিক্ষার্থীরা আবার জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে শিক্ষার্থীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল—‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’। পরে তাঁরা ১৫ মিনিটের জন্য শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন।
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান কর্মসূচি’। তাঁরা বলছেন, দেশজুড়ে আশঙ্কাজনকহারে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ও দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবিতে সব কলেজের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ছয়টি দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁরা চান, এ দেশে আর কেউ যেন ধর্ষণের শিকার না হন। এই ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রযন্ত্রকে বার্তা দেওয়া। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজ নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী শাহবাগে আসবেন।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মিথিলা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে, এ দেশে নারীরা কতটা অনিরাপদ। রাষ্ট্রকে নিরাপদ করতে তাঁরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো—
১. ধর্ষকের শাস্তি জনসমক্ষে নিশ্চিত করা, যাতে সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়।
২. ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। প্রয়োজনে ধর্ষকদের বিচারের জন্য অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনাল গঠন করা।
৩. দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা, মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করা ও এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তী ১৫ কার্যদিবস সময়ে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটিতেও অসামঞ্জস্য থাকলে, সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. ধর্ষণের বিচার সালিসির মাধ্যমে করা যাবে না। বিচার নিশ্চিত করবে শুধু রাষ্ট্র।
অনৈতিক পন্থায় প্রশাসনের কারও সহযোগিতায় যদি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার আসামি ছাড়া পায়, তবে তদন্ত অনুযায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে।
৫. ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অন্তত আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান করা যেতে পারে।
৬. চলমান ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহি করতে হবে।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীর কর্মসূচি জাতীয় জাদুঘরের সামনে হওয়ার কথা। তবে তাঁরা একপর্যায়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন। তখন তাঁদের বোঝানো হয়, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা উচিত হবে না। তাঁরা বিষয়টি বুঝতে পেরে আগের অবস্থানে ফিরে গেছেন। এখন তাঁরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করছেন।