মহাখালী টার্মিনালকে শৃঙ্খলার আওতায় আনতে গেটলক চেকিং সিস্টেম চালু

‘গেটলক চেকিং সিস্টেম’ চালুর পর আইন অমান্য করে যত্রতত্র যাত্রী তোলায় ২৩টি বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশছবি: ট্রাফিক পুলিশের সৌজন্যে

ঢাকার মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা রয়েছে, তা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান ট্রাফিক বিভাগ। এর অংশ হিসেবে আজ রোববার থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোতে ‘গেটলক চেকিং সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। কোনো চালক এই ব্যবস্থা না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া এবং তাঁকে জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে।

গুলশান ট্রাফিক বিভাগ বলছে, গেটলক চেকিং সিস্টেমে টার্মিনাল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া আর কোথাও দাঁড়াতে পারবে না। টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে কাকলী, কুর্মিটোলা, খিলক্ষেত ও সর্বশেষ আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে চলে যাবে। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহাখালী থেকে বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের তালিকা, চালকের নাম, গাড়ির নম্বরসহ একটি প্রস্থানপত্র দেওয়া হচ্ছে। বাস কাকলীতে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, তালিকা অনুযায়ী যাত্রী আছে কি না। বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করছে ট্রাফিক পুলিশ। পাশাপাশি পরিবহন–সংশ্লিষ্টরাও বিষয়টির দেখভাল করছেন।

গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এ এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে গেটলক চেকিং সিস্টেম চালুর পর আইন অমান্য করে যত্রতত্র যাত্রী তোলায় ২৩টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় সাতটি, আইসিডিডিআরবি এলাকায় পাঁচটি, আমতলী এলাকায় ছয়টি, সৈনিক ক্লাব এলাকায় দুটি ও কাকলীতে তিনটি বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গেটলক চেকিং সিস্টেম চালুর আগে সব অংশীজনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে ট্রাফিক বিভাগ। বিশেষ করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে অনেক বৈঠক করা হয়েছে। সবাই একমত হয়েছে, যানজট নিরসনে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করতে দেওয়া হবে না।

গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘিরে পরিবহন বিশৃঙ্খলার বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। টার্মিনাল থেকে ছাড়ার পর সড়কে এসেই যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করে অনেক দূরপাল্লার বাস। এ কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব রমনা পর্যন্ত পড়ে। এতে এই সড়ক ব্যবহারকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। মূলত সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গেটলক চেকিং সিস্টেম চালুর প্রথম দিনেই সড়কে এর প্রভাব পড়েছে বলে জানান ডিসি আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, দূরপাল্লার বাসগুলো আজ যত্রতত্র যাত্রী না তোলার কারণে যানজট সহনীয় ছিল। এই প্রক্রিয়া টেকসই করা গেলে যানজট অনেক কমে যাবে। কোনো বাস আইন অমান্য করলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরাও সংশ্লিষ্ট বাসের চালকের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ শাস্তির উদ্যোগ নিয়েছেন।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি শওকত আলী বাবুল প্রথম আলোকে বলেন, মূলত যানজট এড়ানোর জন্যই সমন্বিতভাবে গেটলক চেকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে যতজন যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়ে যাচ্ছে, বাস থামার পরবর্তী নির্দিষ্ট স্থানে সেটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদি যাত্রীসংখ্যা একই থাকে, তবে ধরে নেওয়া হবে, বাসটি যত্রতত্র থেমে যাত্রী তোলেনি। এটি কার্যকর করতে ট্রাফিক পুলিশ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা একসঙ্গে কাজ করছেন।