রাজধানীর ধূপখোলা মাঠে মার্কেটসহ সব ধরনের নির্মাণ কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা

ধূপখোলা মাঠে মার্কেট তৈরি করা হচ্ছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মার্কেটসহ সব ধরনের নির্মাণ কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন। মাঠটি ডিএসসিসির ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত।

ধূপখোলা মাঠে ডিএসসিসির মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম এবং মাঠটির ধরন পরিবর্তন সংবিধান ও প্রচলিত আইন পরিপন্থী হওয়ায় কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর সর্ববৃহৎ মাঠ। এ মাঠে পুরান ঢাকার সাতটি থানা এলাকার শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে থাকে। মাঠ শুধু খেলার জায়গাই নয়, আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে অবসর সময় কাটাতে মাঠে আসেন।

পরিবেশসচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এবং ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) সাতটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রিটটি করে। অপর ছয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নাগরিক উদ্যোগ ও গ্রিন ভয়েস।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম, শামীমা নাসরিন ও এস হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান।

পরে আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ও রেকর্ডে ওই জায়গা উন্মুক্ত স্থান হিসেবে উল্লেখ আছে। ২০০০ সালের ৩৬ নম্বর অ্যাক্ট অনুসারে উন্মুক্ত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী যেকোনো স্থাপনা গড়তে গেলে রাজউকের অনুমোদন নিতে হবে। তথ্য অধিকার আইনে রাজউকের কাছে আবেদন করা হলে মাঠটিতে মার্কেট নির্মাণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে রাজউক জানায়। এ অবস্থায় মাঠটি রক্ষায় রিটটি করা হয়।’

মিনহাজুল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট ধূপখোলা মাঠে সিটি করপোরেশনের মার্কেটসহ সব ধরনের নির্মাণ কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে সেখানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কোনো নির্মাণকাজ করতে পারবে না।’

রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর সর্ববৃহৎ মাঠ। এ মাঠে পুরান ঢাকার সাতটি থানা এলাকার শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে থাকে। মাঠ শুধু খেলার জায়গাই নয়, আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে অবসর সময় কাটাতে মাঠে আসেন। মাঠটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত। একটি অংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। অপর দুটি অংশ ইস্ট এ-ক্লাব মাঠ ও স্থানীয় খেলার মাঠ।

রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, ওই মাঠে একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ ও নির্মাণকাজ চলমান রাখে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই সিটি করপোরেশন মাঠের ধরন পরিবর্তন করে সেখানে মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এলাকাবাসী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা খেলার মাঠে মার্কেট ও স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করলেও সিটি করপোরেশন এর তোয়াক্কা না করে এবং খেলার মাঠ রক্ষায় আইনি বিধান ও আদালতের আদেশ অনুসরণ না করে মার্কেট নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখলে সাতটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিটটি করে।

আরও পড়ুন