কাকরাইলে জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের অবস্থান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত একচুল না সরার ঘোষণা
তিন দফা দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মোড় থেকে যমুনার দিকে যেতে সড়কের ডানপাশে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে বসে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক–শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
তবে সকাল সাড়ে ১০টার পরে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন জানান, টানা অবস্থানের কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে সমাবেশ সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হবে।
দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পিছিয়ে যাওয়ার আর সুযোগ নেই বলেছেন অধ্যাপক রইছ উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখান থেকে একচুল সরব না। আমাদের রক্তের ওপরে প্রতিষ্ঠিত যে সরকার যদি চোখ রাঙিয়ে কথা বলে, হুমকি-হুমকি-ধামকি দেয়, যদি স্টিম রোলার চালানোর প্রচেষ্টা করে তাহলে সেটাকে রুখে দেব। এ আন্দোলন তখন কাকরাইল পয়েন্টে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা কোথায় যাবে, জানি না, এর দায়দায়িত্ব আমরা নেব না।’
সমাবেশে যোগ দিতে পর্যায়ক্রমে বাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আসছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঘোষণা অনুযায়ী, জুমার নামাজের পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে গণ–অনশনে বসবেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তায় বসে স্লোগান দিচ্ছেন। মোড়ে থাকা বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সারা রাত ওই জায়গাটিতে অবস্থান নিয়ে আছেন বলে জানান। এ সময় শিক্ষার্থীদের থেমে থেমে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা, ‘এক দুই তিন চার, হল আমার অধিকার’, ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মানি নারে মানি না, বৈষম্য মানি না’ প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে সেখানে কিছু শিক্ষকদের এসে যোগ দিতে দেখা গেছে। সকাল সোয়া ১০টার কিছু পরে সেখানে একটি বাসে শিক্ষার্থীরা এসে পৌঁছান। সাড়ে ১০টার দিকে আরেকটি বাস এসে পৌঁছায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী আতাউল্লাহ আল আহাদ সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রথমে জড়ো হয়েছেন। পরে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সবাই কাকরাইলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তাঁরা পৌঁছানোর পরই সমাবেশ শুরু করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন গণ–অনশন কর্মসূচি ও সমাবেশের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিও চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
কর্মসূচি ঘোষণা করে অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, ‘আজ দুই দিন অতিবাহিত হতে চলছে। সরকারের কর্ণকুহরে আমাদের আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে না। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাইনি। ওনারা (সরকার) আমাদের কথা শুনছে না, আমাদের কথা শোনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না।’
দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘হয় দাবি আদায় হবে, না হয় আমরা স্থান ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না আমাদের মৃত্যু হয়। যখন আমরা গ্রিন সিগন্যাল পাব, আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে; তাৎক্ষণিক আমরা আমাদের এই কর্মসূচি সমাপ্ত করব।’
দাবির ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে গতকাল রাতেও কাকরাইল মোড়ে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেন অধ্যাপক রইছ উদ্দীন।
তিন দফা দাবিতে গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার অভিমুখে লংমার্চ নিয়ে যাওয়ার সময় কাকরাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। এ সময় ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অর্ধশত শিক্ষক–শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তখন থেকে সেখানে তাঁদের লাগাতার অবস্থান চলছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনবৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার তিন দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে যমুনা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।