সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পেলে ওয়ার্ড হবে ‘লাল চিহ্নিত’: মেয়র তাপস
এক সপ্তাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কোনো ওয়ার্ডে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে সেই ওয়ার্ডকে ‘লাল চিহ্নিত’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এরপর ওই ওয়ার্ডে চালানো হবে দিনব্যাপী বিশেষ চিরুনি অভিযান।
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আজ বুধবার এ কথা জানিয়েছেন।
মেয়র তাপস বলেন, এখন থেকে সপ্তাহের প্রতি শনিবার করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মীসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সব স্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিযান চালানো হবে। এর মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঠেকানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারসংলগ্ন এলাকায় বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত কার্যক্রম পরিদর্শনে যান শেখ ফজলে নূর তাপস। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘আগামী শনিবার আমরা আরেকটি বিশেষ অভিযান নিচ্ছি (পরিচালনা শুরু করব)। যেটা ওয়ার্ডভিত্তিক। যে ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে ১০ জনের অধিক রোগী শনাক্ত করা হবে, সে ওয়ার্ডগুলোকে আমরা বিশেষ “লাল চিহ্নিত” এলাকা হিসেবে ঘোষণা করছি। সে ওয়ার্ডের এলাকাবাসী, সব হোল্ডিং-স্থাপনার মালিকদের আমরা আহ্বান করছি, তারা যেন নিজ নিজ বাসাবাড়ি, স্থাপনা, আঙিনা নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।’
এলাকাবাসীর দায়িত্বশীল ভূমিকা কামনা করে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘সেদিন কেউ কাজে যাবেন না। এটাই সবচেয়ে বড় কাজ হবে। আমরা যদি নিজেদের জীবন সুরক্ষিত রাখতে চাই, তাহলে এটাই হবে আমাদের গুরুদায়িত্ব। আমাদের এ কর্মসূচিতে আপনারা অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকবে। আমরা দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে এডিস মশার উৎসস্থলগুলো ধ্বংস করব। যার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।’
৫, ২২, ৫৩ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে আগামী শনিবারে বিশেষ এ অভযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়ে মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘এই চার ওয়ার্ডে গত এক সপ্তাহে আমরা ১০ জনের বেশি রোগী পেয়েছি। চারটি ওয়ার্ডে আগামী শনিবার অভিযান পরিচালনা করব। এরপর যদি আমরা দেখি যে অন্য কোনো ওয়ার্ডে বা একাধিক ওয়ার্ড থেকে এক সপ্তাহে ১০ জনের বেশি রোগী আসছেন, তাহলে আমরা সে ওয়ার্ডগুলোতেও (পরের শনিবার বিশেষ এ অভিযান পরিচালনা) করব। আমরা মনে করি, এভাবে এডিস মশা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’
ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী স্থিতিশীল হলেও তা কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘এখন ডেঙ্গু রোগের ভরা মৌসুম। এ সময় তা ঊর্ধ্বগামী হওয়ার কথা। কিন্তু আপনারা লক্ষ করেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগ এখন স্থিতিশীল। আমাদের রোগীর সংখ্যা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছি। গতকালও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০০–এর নিচে ছিল। ভরা মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুরূহ হলেও আমরা কাজটি করে চলেছি।’ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য আজকের এ কর্মসূচি বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘ঢালাওভাবে বলা—এটা কাজ করছে না, ওটা কাজ করছে না। আমার ফলাফলই তো বলে দিচ্ছে কোনটা কাজ করছে। কীটনাশক যদি কাজ না করত, তাহলে এই ভরা মৌসুমে ১০০–এর নিচে রোগী রাখা কোনো দেশই তো পারছে না। যাঁরা এ কথাগুলো বলছেন, তাঁরা কীটতত্ত্ববিদ নন। তাঁরা আসলে বিভিন্ন (ধরনের) কীটনাশক বিক্রি করে ঢাকা সিটি করপোরেশনে চক্র সৃষ্টি করেছিলেন। (তাঁরা) সেই একটি চক্রের (অংশবিশেষ)।’
পরে মেয়র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ভেতর ঘুরে দেখেন এবং মশককর্মী ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ইমানের অঙ্গ। তাই আমি শিক্ষার্থীদের বলব, তোমরা সব সময় তোমাদের আঙিনা পরিষ্কার রাখবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার, সিটি করপোরেশন যেসব দিকনির্দেশনা দিচ্ছে, সেগুলো যদি তোমরা অনুসরণ কর, তাহলে এই ক্যাম্পাসে কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করছেন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান।
অনুষ্ঠানে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা, প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।