যে কারণে ডেঙ্গুতে ঢাকায় মৃত্যুহার বেশি

দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে গড় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৫। আর ঢাকায় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৭। ঢাকার বাইরে এ হার শূন্য দশমিক ২।

ডেঙ্গু
ফাইল ছবি: বাসস

দেশে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ইতিমধ্যে লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীর সংখ্যা কমতে থাকলেও ঢাকায় মৃত্যু হচ্ছে বেশি। ঢাকায় মৃত্যুহারও অন্য এলাকা থেকে বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে গড় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৫। আর ঢাকায় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৭। ঢাকার বাইরে এ হার শূন্য দশমিক ২।

ঢাকায় এই মৃত্যুহারকে ‘বেশি’ বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ। তিনি গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় মৃত্যুহার এত বেশি হওয়ার কারণ, ডেঙ্গুর যে চারটি ধরন আছে, এর মধ্যে একাধিক ধরনে আক্রান্ত হয়ে গেছেন ঢাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ। এসব ব্যক্তি নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁদের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাঁদের প্লাজমা লিকেজ হচ্ছে, উচ্চ রক্তচাপ বাড়ছে, কখনো কখনো কিডনির ওপর চাপ পড়ছে। তাঁরা দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন।’

ঢাকায় মৃত্যুহার এত বেশি হওয়ার কারণ, ডেঙ্গুর যে চারটি ধরন আছে, এর মধ্যে একাধিক ধরনে আক্রান্ত হয়ে গেছেন ঢাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ। এসব ব্যক্তি নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁদের জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
বে-নজির আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে ৪৯৩ জন মারা গেলেন। আর চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ২৪২ জনের। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৬৬ জন। বাকি ১২৭ জন ঢাকার বাইরের। ঢাকার বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। সেখানে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫২ জন। চট্টগ্রামের পর বরিশাল বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। সেখানে মারা গেছেন ৩০ জন।

ঢাকায় মৃত্যু বেশি হওয়ার পেছনে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি এবং দেরিতে হাসপাতালে যাওয়াকেও কারণ হিসেবে তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজির আহমেদ।

এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে তিনজন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে পাঁচজন মারা গেছেন। এযাবৎ ঢাকার বাইরে প্রায় প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও গতকাল এর ব্যতিক্রম দেখা গেল।

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল গত বছর। চলতি বছর অনেক আগেই সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত মাসেই ডেঙ্গুতে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার বাইরে বেশ কিছুদিন ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে সেখানে চাপ তৈরি হচ্ছে। যদিও এক দিনের মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করা যায় না।

ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য বিষয়ে নির্দেশিকা ঠিকমতো পেলেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো মশা নিধনে কতটুকু কাজ করতে পারছে, তা নিয়ে সন্দিহান ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু কার্যকর উদ্যোগ আছে; কিন্তু বাইরে তা নেই। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও বরিশালের পরিস্থিতির দিকে নজর দিতে হবে। সেখানে কিন্তু সংক্রমণ বাড়ছে প্রতিদিন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ১৬৪ জন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৪২ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৩২৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৩৫৯ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫০ হাজার ১৭০ ও ঢাকার বাইরে ৫৪ হাজার ৭৮৯ জন।

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল গত বছর। চলতি বছর অনেক আগেই সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত মাসেই ডেঙ্গুতে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। এ ছাড়া ২০২০ সালে ৭ জন ও ২০২১ সালে মারা যান ১০৫ জন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন