কোরবানির হাটে হাজির বাদশা, মোহনবাবু, রাজাবাবুরা

রাজাবাবুর মালিক জানিয়েছেন, তাঁর গরুটির ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি
ছবি: প্রথম আলো

লাল–সাদা রঙের মিশ্রণের মোটাতাজা গরু। মালিক আদর করে গরুটির নাম রেখেছেন ‘বাদশা’। রাজা-বাদশাদের মতোই গরুটির হাবভাব, হম্বিতম্বি যেন। অপরিচিত কেউ কাছে ঘেঁষলেই মাথা নাড়ছে সে। নাক দিয়ে ফোঁসফোঁস আওয়াজ বেরোচ্ছে। ভাবটা এমন, সুযোগ পেলেই যেন সজোরে গুতা দিয়ে দেবে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গরুটি তোলা হয়েছে রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে।

পাবনার সদর থানার দুবলিয়া এলাকার কৃষক মো. ফিরোজ মিয়া বাদশাকে হাটে এনেছেন। জানালেন, ফ্রিজিয়ান ক্রস জাতের বাদশার ওজন প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি। নিজের পালিত গাভি থেকেই এর জন্ম, বয়স চার বছর। গতকাল শুক্রবার রাতে ১৪ হাজার টাকা ট্রাকভাড়া দিয়ে গরুটিকে হাটে আনা হয়।

আজ শনিবার দুপুরে গাবতলীর হাটে দাম জানতে চাইলে ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘১৭ লাখ টাকা দাম চাইছি। কিছু কম হলেও এবার বিক্রি করে দেব। গ্রামে স্থানীয় পাইকাররা বাদশার জন্য ১৩ লাখ টাকা দাম বলেছিল।’

আরও পড়ুন

ফিরোজ মিয়া জানান, গতবারও কেরানীগঞ্জের একটি হাটে বাদশাকে নেওয়া হয়েছিল। সেবার দাম উঠেছিল ৯ লাখ টাকা। তখন তিনি ১৫ লাখ টাকা দাম চেয়েছিলেন।

নিজের প্রিয় গরুগুলোকে খামারিরা আদর করে বিভিন্ন নাম দিয়ে থাকেন। বাহারি সব নামের বিশালাকার এসব গরু হাটে আসা ক্রেতাদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে। অনেক ক্রেতাই কোরবানির জন্য এমন বাহারি নামের গরু কেনেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর বিভিন্ন হাটে এমন বাহারি নামের বিশালাকার গরুগুলো আসতে শুরু করেছে। আজ দুপুরে রাজধানীর গাবতলীর হাটে গিয়ে এমন সাতটি গরু দেখা গেছে।

এমন একটি গরুর নাম রাজাবাবু। পুরোটাই কালো রঙের লোমে আবৃত বিশালাকার এই গরু। খামারি ভাষাণ মিয়া গরুটি এনেছেন মেহেরপুরের গাংনী থেকে। জানালেন, সাত মাস বয়সে রাজাবাবুকে কিনেছেন। এখন এর বয়স পাঁচ বছর।

ভাষাণ মিয়া জানান, রাজাবাবু ফ্রিজিয়ান ক্রস জাতের গরু। ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি বা ৩৫ মণ হবে। রাজাবাবুকে পালা হয়েছে গম–ভুট্টার ভুসি, ছোলা, খড় ও ঘাস খাইয়ে। প্রতিদিন তিন বেলা গোসল করানোর পাশাপাশি রাজাবাবুকে প্রাতর্ভ্রমণ বা সান্ধ্যভ্রমণের মতো নিয়ম করে হাঁটানোও হতো।

দাম জানতে চাইলে ভাষাণ মিয়া বলেন, ‘২০ লাখ টাকা দাম চাইছি। বাকিটা নির্ভর করছে হাটের পরিস্থিতির ওপর।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন করোনার খারাপ অবস্থা অনেকটাই কেটে গেছে। মানুষের হাতে টাকাপয়সাও রয়েছে। আশা করছি, এবার ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।’ এলাকার গরু ব্যবসায়ীরা রাজাবাবুর জন্য ১১ লাখ টাকা দাম দিতে চেয়েছিলেন বলে তিনি জানান।

বাদশার মালিক গরুটির দাম চাইছেন ১৭ লাখ টাকা
ছবি: প্রথম আলো

খানিক এগোতেই চোখ পড়ে মোহনবাবু নামের গরুটির দিকে। আড়াই বছরের একটু বেশি বয়সের গরুটির ওজন হয়েছে এক হাজার কেজির মতো। রাখার জায়গার সমস্যার কারণে মোহনবাবুকে বিক্রির জন্য এ বছর হাটে তোলা হয়েছে বলে জানান মালিক রনি আহমেদ।

গতকাল রাতে মেহেরপুর থেকে গাবতলীর হাটে এসেছেন রনি আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মোহনবাবুকে যে ঘরে রাখা হয়, সেই ঘরে ঢোকাতে ও বের করতে সমস্যা হচ্ছে। কদিন পর সেটাও আর সম্ভব হবে না। আবার ঘর ভেঙে নতুন করে বানাতে গেলে প্রায় লাখ টাকা খরচ পড়বে। তাই কোনো উপায় না দেখে বিক্রির জন্য হাটে আনা হয়েছে।

রনি আহমেদ আরও জানান, ‘দাম চাইছি ১৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুঠোফোনে অনেকে যোগাযোগ করছেন। তবে এখনো কেউ দাম বলছেন না। রমজানের ঈদের সময় পাইকাররা ছয় লাখ টাকা দাম বলেছিল।’

গাবতলীর স্থায়ী হাটে গরু নিয়ে আসা পাইকাররা জানান, এ বছর গরুর দাম তুলনামূলক বেশি। গত বছরের তুলনায় প্রতি মণে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা বাড়তি দামে স্থানীয় হাটবাজার থেকে গরু কিনতে হচ্ছে। আর আকারভেদে ছাগলের দাম পড়ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি।

খামারি ও পাইকাররা বলছেন, নিত্যপণ্য ও গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কোরবানির বাজারেও পড়েছে। যাঁরা পালন করেছেন, তাঁদের নিজেদের খাবারের যেমন ব্যয় বেড়েছে, তেমনি যে প্রাণীটিকে পালন করা হচ্ছে, ওই প্রাণী পালনের খরচও বেড়ে গেছে।

পাবনার ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় হাট থেকেই পাঁচ-ছয় হাজার টাকা বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। ট্রাকে পরিবহনের খরচও বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে গরুর দাম অন্যবারের চেয়ে বেশি।

হাটে নিয়ে আসা আড়াই থেকে তিন মণ ওজনের একেকটি গরুর জন্য দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০-৯০ হাজার টাকা। আর ৫ থেকে ৭ মণ ওজনের একেকটি মাঝারি আকারের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, এ বছর কোরবানির হাটের জন্য গবাদিপশুর সরবরাহের সংখ্যা গতবারের চেয়ে দুই লাখের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। প্রায় ২৮ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়নি।